'নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস - এই দুটো জিনিস জীবনে থাকা খুবই জরুরি'। এই শ্রদ্ধাময়ী মহিলার এই কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, সদ্গুরুর ওপর অটল বিশ্বাস কীভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সেটা এই অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
============
হরি ওম। আমি মনে করি, সদ্গুরু অনিরুদ্ধ বাপুর কৃপাদৃষ্টি আমার পুরো পরিবারের ওপর সদাসর্বদা থাকাটা আমাদের পরম সৌভাগ্য। আমার স্বামীর নাম বিরাজসিংহ ত্রাসি, ছেলের নাম গৌরবসিংহ ত্রাসি এবং আমরা হংকংয়ে থাকি। আজ (যখন এই গল্পটা বলছি) হংকংয়ে আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের বিশ বছর হয়ে গেছে। বাপুর কাছে আসার পর থেকে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাপুর আমার উপর সবচেয়ে বড় কৃপা হল যে তিনি আমাদের কাছে কোনো বড় বিপদকে ঘেঁষতে দেননি। তাঁর চরণে আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মাথা নত করি। শ্রীরাম।
প্রত্যেকের জীবনে অনেক সমস্যা আসে। আমার জীবনেও এমন অনেক উত্থান-পতন এসেছে। প্রতিবারই বাপু আমাদের সঙ্গে থাকায় আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পেরেছিলাম।
২০০৭ সালে আমরা হংকংয়েই আমার স্বামীর পঞ্চাশতম জন্মদিন পালন করেছিলাম। সেদিন আমরা ভালোবাসার সঙ্গে বাপুর পাদুকা পূজন করেছিলাম। এর তারপরই আমাদের বাড়িতে একটা ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আমার শাশুড়িমার একদিন সকাল ১১টা নাগাদ খুব খিদে পেয়েছিল। ঠাণ্ডার দিন ছিল, তাই আমি আমার শাশুড়িমাকে বলেছিলাম, "চলো, আমরা গরম গরম সিঙ্গারা খাই।" আমি সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম এবং সিঙ্গারা প্রস্তুত করার জন্য গ্যাস জ্বালিয়েছিলাম আর একটা ছোট কড়াইতে তেল দিয়ে সেটা হালকা আঁচে বসিয়েছিলাম। হঠাৎ আমার ফোনের রিং বাজতে শুরু করেছিল। গিয়ে দেখি, একটা ভুল ফ্যাক্স এসেছে। আমার ফ্যাক্স মেশিন সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায়, ভুল করে আমি এমন একটা বোতাম টিপে দিয়েছিলাম যে, একের পর এক কাগজ ফ্যাক্স মেশিন থেকে বের হতে শুরু করে দিয়েছিল। আমি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। আমি আসলে খুব ভীরু প্রকৃতির হওয়ায় ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
এই তাড়াহুড়োতে আমি গ্যাস জ্বালানো আছে সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরেই কিছু পড়ার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, জানালা খোলা থাকায় হাওয়ায় হয়তো কিছু নিচে পড়ে গিয়েছে। আমরা বেডরুমে ছিলাম। যখন আমি বেডরুম থেকে জানালা বন্ধ করার জন্য বাইরে এসেছিলাম, তখন রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেছিলাম। আমার রান্নাঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দরজা খুলতেই ভেতরের ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আমার মনে পড়ে গিয়েছিল যে, কড়াইটা গ্যাসে বসানো ছিল। এর আগে আমি কখনো এত বড় আগুন দেখিনি। আমার পুরো রান্নাঘর ধোঁয়া আর আগুনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। যে আওয়াজ হচ্ছিল, সেটা সিলিংয়ের টিউবলাইট আর বাল্ব ফেটে যাওয়ার আওয়াজ ছিল। সেগুলো ফেটে নিচে পড়ছিল এবং গ্যাসের চুলার ওপর যে চিমনি ছিল, তার টুকরোগুলোও জ্বলন্ত অবস্থায় নিচে পড়তে শুরু করেছিল।
আমি এই দৃশ্য দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং বাপুকে ডেকে বলেছিলাম, 'বাপু, তুমি সবকিছু ঠিক করে দাও'। তারপর এমনভাবে আমার মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি এসেছিল যে, আমি কিছু না ভেবেই রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। ইলেকট্রিক্যাল বক্স আমাদের রান্নাঘরেই থাকে। সেটা বন্ধ করার সাহস আমার হয়নি, কারণ আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আমার সামনে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমার শাশুড়িমা আমাকে বারবার সাহস দিয়ে বলেছিলেন, "বাপু আমাদের সাথে আছেন, একদম ভয় পেও না।" তাই আমি সাহস করে পরিস্থিতি সামলাচ্ছিলাম। আমি ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করেছিলাম এবং ষষ্ঠ তলা থেকে দৌড়ে ম্যানেজমেন্ট অফিসে গিয়েছিলাম। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের এখানে পুলিশ, হাসপাতালের কর্মী, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয়ে গিয়েছিল। বিদেশে কে প্রতিবেশী, সেটাও কেউ জানে না। সেদিন অবাক করার মতো ব্যাপার হয়েছিল যে, আমাদের প্রতিবেশীরাও আমাদের সাহায্য করেছিলেন। এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও আমাদের সবার মধ্যে বিশ্বাসের কোনো অভাব ছিল না এবং আমাদের কারোরই কোনো আঘাত লাগেনি। এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল।
আমার স্বামী বাড়িওয়ালাকে ফোন করেছিলেন এবং দুর্ঘটনার গুরুত্ব জানিয়েছিলেন। হংকংয়ে নিয়মকানুন খুব কঠোর এবং আমাদের বাড়িওয়ালার স্বভাবও খুব কঠোর ছিল। এত কিছুর পরেও তিনি কীভাবে ক্ষতি হয়েছে তা দেখতে বা টাকা নিতেও বাড়িতে আসেন নি। বরং তিনি বলেছিলেন, "যা কিছু মেরামতের কাজ হবে, আপনারা নিজেরাই তা করিয়ে নিন।" ব্যাপক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও কারোরই কোনো আঘাত লাগেনি। বাপু আমাদের সবার যত্ন নিয়েছিলেন। অনেক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা সবাই নিরাপদে ছিলাম। বাপুর অকারণ করুণা যারা জীবনে লাভ করে, তাদের জীবনে সুখ, শান্তি এবং আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
এবার আমার জীবনের দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা বলছি। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস - এই দুটো জিনিস জীবনে থাকা খুবই জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনের সব কাজ সহজেই সম্পন্ন হয়। সদ্গুরুর প্রতি বিশ্বাসের কারণে ভক্তের শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমার আত্মবিশ্বাস প্রথমে কম থাকায় আমি প্রতিবারই খুব ভয় পেতাম। তার ওপর ছোটবেলা থেকেই আমার জলের ভয় ছিল। আমি জলে ডুবে যাচ্ছি, এমন অনেক স্বপ্ন আমি সব সময় দেখতাম।
আমাদের হংকংয়ের উপাসনা কেন্দ্রের একটি পরিবার বাপুর পাদুকা পূজনের আয়োজন বোটে করেছিল। এটি আনন্দের উৎসব ছিল, কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগছিল। এর কারণ ছিল যে, প্রথমে এর জন্য আমাকে বোটে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের ১০০ ফুট উঁচুতে হেঁটে উঠতে হবে। আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করতেন বলে তাঁর কোনো অসুবিধা মনে হয় নি এবং ছেলে তো বোটে, তাও এত উঁচুতে যাবে বলে খুবই উত্তেজিত ছিল। আমার কিন্তু ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে এই চিন্তাও এসেছিল যে, পূজার জন্য ওনারা কি অন্য কোনো জায়গা খুঁজে পান নি? আমি মনে মনে বাপুকে বলেওছিলাম, 'বাপু, এত উঁচুতে, তাও জলে গিয়ে পূজা কেন করতে হবে ওনাদের'? আমার ছেলে আমাকে সাহস দিতে দিতে বলেছিল, "মা, একদম ভয় পাবে না। তুমি আমাদের দুজনের মাঝখানে হাঁটবে।" একইভাবে আমার স্বামী বললেন, "ওপরের দিকে ওঠার সময় একটুও পেছনে ফিরে তাকাবে না।" আমি বাপুর নাম জপতে জপতে ওপরের দিকে উঠছিলাম। এর মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছিল। এই সব ভয়ের কারণে আমি আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলাম।
আমরা নিরাপদে ১০০ ফুট ওপরে পৌঁছালাম এবং সেখানে প্রথমে আমার দেখা হল একজন ৭০ বছর বয়সী, আমাদের শ্রদ্ধাবান বন্ধুর মায়ের সঙ্গে। তিনিও আমাদের মতোই ওপরে উঠে এসেছিলেন এবং আনন্দ সহকারে আমাদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে দেখেই আমার নিজের খুব লজ্জা লাগছিল। আমি জলকে ভয় পেতাম, কিন্তু বাপু আমার সাথে আছেন - এই অটল বিশ্বাস যদি আমার মধ্যে থাকে, তাহলে আমার আত্মবিশ্বাস অবশ্যই বাড়বে। কিন্তু আমি আমার নিজের ভয়ে আটকে ছিলাম। বাপুর কৃপায় এই ভুলটা আমার নজরে এসেছিল। এই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা মহিলা যদি এত উঁচুতে আসতে পারেন, তাহলে আমার উচ্চতা ও জলকে ভয় পাওয়ার কারণ কী? এই চিন্তা আসতেই আমি পাদুকা পূজনে আনন্দ ও হাসিমুখে অংশগ্রহণ করেছলাম, কারণ আমার মনের ভয় তখন বাপুর প্রতি বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছিল।
সেদিন থেকে আমার জলের ভয় চলে গিয়েছিল এবং স্বপ্ন দেখাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আত্মবিশ্বাস বাড়ার কারণে এখন আমার মধ্যে খুব ভালো পরিবর্তন এসেছে। ভয় এবং হীনমন্যতার কারণে আমি আমার অনেক ইতিবাচক জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার লেখালেখি এবং এমন অনেক শখ আমি এখন আবার শুরু করতে পেরেছি। বাপুভক্তির কারণে অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান হয়। বাপুর কাছে আমার একটাই প্রার্থনা। 'বাপু, তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস যেন এভাবেই সব সময় বাড়তে থাকে, এটাই তোমার চরণে আমার প্রার্থনা।
ગુજરાતી >> ಕನ್ನಡ >>