প্রতি বছর মার্গশীর্ষ মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় শনিবার থেকে শ্রদ্ধাবানরা নিজেদের বাড়িতে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধের পাদুকা পূজা করে 'সচ্চিদানন্দোৎসব' উদযাপন করেন। এটি স্বেচ্ছায় দুই দিন বা পাঁচ দিন পর্যন্ত পালন করা হয়।
শ্রীপ্রেমস্বরূপা তব শরণম্। পুরুষার্থরূপা তব শরণম্।
শরণাগতত্রিতাপহরা। সচ্চিদানন্দা তব শরণম্॥
আহ্নিক'-এর এই অচিন্ত্যদানী স্তোত্রের নবম শ্লোকটি আমরা নিয়মিত পাঠ করি। মানুষের জীবন থেকে আনন্দ হরণ করে এবং তাকে পীড়িত করে এমন তিনটি তাপ হলো - আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক এবং আধিভৌতিক তাপ। সচ্চিদানন্দ স্বরূপ সদগুরু তত্ত্বই এই ত্রিবিধ তাপ থেকে আমাদের মুক্ত করে আমাদের জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
সেই সচ্চিদানন্দ তাঁর কার্য সম্পাদনে সমর্থ ও তৎপর, কিন্তু তাঁর এই কার্য আমাদের জীবনে হওয়ার জন্য আমাদেরকেই তাঁকে ভালোবাসতে হবে, তাঁর ঋণ স্মরণ করে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে এবং সদগুরুর চরণে সম্পূর্ণ শরণাগত ভাব গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের জীবনে প্রেমভাব, কৃতজ্ঞতাভাব এবং শরণাগতভাব—এই তিনটি ভাব যত বেশি বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি আমাদের প্রপঞ্চ (ব্যবহারিক জীবন) ও পরমার্থ (আধ্যাত্মিক জীবন) আনন্দময় হবে এবং এই কারণেই শ্রদ্ধাবানরা মার্গশীর্ষ মাসে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে 'সচ্চিদানন্দোৎসব' উদযাপন করেন।
স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলেছেন, 'মাসানাং মার্গশীর্ষোহম্' (মাসগুলোর মধ্যে আমি মার্গশীর্ষ)। মার্গশীর্ষ মাস অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাস দেবযান মার্গের অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইচ্ছুক শ্রদ্ধাবানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পর্বকাল হিসেবে গণ্য হয়।
এই পথ ধরে সচ্চিদানন্দের দিকে যাওয়ার 'প্রেম-যাত্রা' সহজ করার জন্যই শ্রদ্ধাবানরা মার্গশীর্ষ মাসে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে সচ্চিদানন্দোৎসব উদযাপন করেন।
এই পথের যাত্রায় আমাদের প্রপঞ্চ ও পরমার্থ একই সাথে সুখের হওয়ার জন্য মন, প্রাণ এবং প্রজ্ঞা—এই তিনটি স্তরে 'উচিতত্ব' (যথার্থতা/সঠিকতা) বজায় রাখা জরুরি। সচ্চিদানন্দোৎসবে শ্রদ্ধাবানরা অনিরুদ্ধ-অথর্ব স্তোত্র এবং অনিরুদ্ধ অষ্টোত্তরশত নামাবলী সহ, উচিতত্ব লাভের উদ্দেশ্যে সদ্গুরু শ্রীঅনিরুদ্ধের পাদুকা পূজা করেন।
সচ্চিদানন্দোৎসব উদযাপনকারী শ্রদ্ধাবানদের মনোভাব হলো— এই পূজার অথর্ব স্তোত্র যেন আমাদের ভেতরের চঞ্চলতার নাশ করে এবং অষ্টোত্তরশত নামাবলী যেন আমাদের দেহের ১০৮টি শক্তি কেন্দ্রকে সামর্থ্য যোগায়।
সচ্চিদানন্দোৎসব পালনকারী শ্রদ্ধাবানরা সদগুরুর কাছে এই আশীর্বাদ চান :-
১) আমাদের তিন স্তরের অশুদ্ধি, অপবিত্রতা, অনুচিততা দূর হোক,
২) আমাদের মধ্যে প্রেমভাব, অম্বজ্ঞ-ভাব এবং শরণাগতভাব বৃদ্ধি পেতে থাকুক,
৩) আমাদের মন, প্রাণ ও প্রজ্ঞা—এই তিনটি স্তরকে পীড়াদায়ক চঞ্চলতা, অবরোধ এবং দিকভ্রান্তি—এই তিন অসুরের নাশ হয়ে তিন স্তরে উচিতত্ব বা যথার্থতা বজায় থাকুক।
বামপাদেন অচলং দক্ষিণেন গতিকারকম্' অর্থাৎ বাম পদ দ্বারা অনুচিতকে রোধকারী এবং দক্ষিণ পদ দ্বারা উচিতকে গতি প্রদানকারী—যাঁর চরণন্যাসকে এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেই সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধের পাদুকা পূজা করে সদগুরুর কৃপায় প্রপঞ্চ ও পরমার্থ একই সাথে আনন্দময় হোক—এই বিশ্বাসে শ্রদ্ধাবানরা সবাই সচ্চিদানন্দোৎসব উদযাপন করেন।
मराठी >> हिंदी >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>> മലയാളം>>
Comments
Post a Comment