![]() |
সন্দর্ভ : সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর দৈনিক প্রত্যক্ষ-এ প্রকাশিত অগ্রলেখ (০৩-০৯-২০০৬) |
ভারতীয় কীর্তন পরম্পরায় পরমাত্মার বিভিন্ন রূপের নানা আখ্যান ও কাহিনী বলা হয়। এই নারদীয় পদ্ধতির কীর্তন ঐতিহ্য ভারতে হাজার হাজার বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। শ্রী সাই সচ্চরিতে পরমপূজ্য শ্রী হেমাডপন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিপাদন করেছেন যে, কীর্তন প্রতিষ্ঠানের আদ্যপ্রবর্তক দেবর্ষি নারদ। এই কীর্তনকারেরা তাঁদের কীর্তনের মাধ্যমে শুদ্ধ ভক্তির প্রচার ও প্রসার করেছেন, পাশাপাশি সমাজ যেন বেশি করে একত্র থাকে তার জন্য অসীম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, এবং সেই প্রচেষ্টা থেকেই এই নারদীয় পরম্পরা বজায় রাখা বহু কর্তারা ভগবানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা গুণ-অধিষ্ঠিত (গুণভিত্তিক) কাহিনী প্রচলিত করেছেন। এই কারণে পরমাত্মার বিভিন্ন রূপের উপাসক ভক্তসমাজকে একত্র করা তাঁদের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে উঠেছিল।
শ্রীমহাগণপতির কীর্তনে অনেক কাহিনী শ্রীরঙ্গ আকারে বলা হয়। তার মধ্যেই একটি প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় কাহিনী হল – “অন্ধকাসুর আখ্যান”।
![]() |
সদগুরু শ্রীঅণিরুদ্ধ বাপুর বাড়িতে গণেশোৎসবে বিরাজমান বালগণেশ |
শিশু গণেশ গজমুখ লাভ করলেন এবং এই বালগণেশ শিব-শক্তির সঙ্গে অর্থাৎ তাঁর পিতামাতার সঙ্গে কৈলাস পর্বতে বালক্রীড়া করতে লাগলেন। বড় ভাই কার্তিকেয়স্বামী পিতার আদেশে বৃহস্পতির আশ্রমে অধ্যয়নের জন্য গিয়েছিলেন। একবার যখন শিবশঙ্কর তাঁর গণদের সঙ্গে বিশ্বভ্রমণে বেরোলেন, তখন বালগণেশও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য জিদ ধরলেন। মহাদেব যখন বিশ্বভ্রমণ করবেন, তখন তাঁর বহু অসুরের সঙ্গে সংঘর্ষ হবে, এটা তো স্বাভাবিকই। তাই বালগণেশ যেন তাঁর পিতার সঙ্গে না যান, এই ভাবনাই মাতা পার্বতীর মনে ছিল। কিন্তু শ্রীমহাদেব তাঁর পুত্রকে সঙ্গে নিতে রাজি ছিলেন। বালগণেশের বুদ্ধি ও শক্তির কথা শিব-পার্বতী দুজনেই জানতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মা তো মা-ই, সন্তান যতই শক্তিশালী হোক, মায়ের মনে চিন্তা থাকেই।
বালগণেশের জিদ এবং স্বামীর ক্রোধপূর্ণ ও একগুঁয়ে স্বভাবের কারণে মাতা পার্বতী দ্বিধায় পড়ে গেলেন। পার্বতী মাতা তাঁর প্রিয় ভ্রাতা অর্থাৎ শ্রী বিষ্ণুকে স্মরণ করলেন। (আজও মীনাক্ষী মন্দিরে শিব-পার্বতীর বিবাহের দৃশ্যে শ্রীবিষ্ণুকে পার্বতীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসাবে কন্যাদান করতে দেখা যায়।) সেই মুহূর্তে, স্মরণ করা মাত্রই শ্রীবিষ্ণু সেখানে আবির্ভূত হলেন। মানবস্তরে যেমন ভাই-বোনের সম্পর্ক খুব স্নেহময়, তেমনই দেবস্তরে এই সম্পর্কের অর্থ ও প্রসঙ্গ অত্যন্ত পবিত্র ও প্রতীকী, কারণ এই সকল সম্পর্ক অভেদময়।
মা পার্বতী তাঁর সমস্যা শ্রীবিষ্ণুকে বললেন এবং শ্রীবিষ্ণু সঙ্গে সঙ্গেই একটি উপায় বাতলে দিলেন। শ্রীবিষ্ণু পার্বতী মাতাকে মহাদেবের সঙ্গে এই বিষয়ে তর্ক করতে বললেন এবং বললেন, 'তাঁর ক্রোধযুক্ত প্রথম শব্দটি বাইরে বেরোতেই, আমি সেই শব্দটিকে একটি অসুরে রূপান্তরিত করব এবং বালগণেশের মনে সেই ভয়ঙ্কর অসুর সম্পর্কে ভয় সৃষ্টি করব। এতে বালগণেশ নিজেই তাঁর জিদ ছেড়ে দেবে এবং শিবও তাঁর ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে পুত্রের প্রতি স্নেহের কারণে তাঁকে সঙ্গে নেওয়ার জিদ ছেড়ে দেবেন।”
সবকিছু তেমনই ঘটল এবং শ্রীশিব তাঁর কাজে বেরিয়ে গেলেন। বালগণেশ মা-র সঙ্গে কৈলাসে থেকে গেলেন। মহাদেবের ক্রোধান্বিত প্রথম শব্দ থেকে বিষ্ণুর সৃষ্ট সেই অসুর কাজ সম্পন্ন হতেই বিলীন হয়ে গেল; কিন্তু বালগণেশ তাঁর মনে সৃষ্ট ভয়কে কেবল মাতৃস্নেহের কারণেই মেনে নিয়েছিলেন—ছেলেই মায়ের জিদ পূরণ করেছিল। মহাদেব চলে যেতেই বালগণেশ তাঁর মনে থাকা সেই ভয়কে “থুথু” দিয়ে ফেলে দিলেন, আর সেই থুথু থেকেই এক অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দৈত্যের সৃষ্টি হল।
![]() |
পরম পূজনীয় সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপুর বাড়ির গণেশোৎসবের শ্রী’র মূর্তির দর্শন |
শ্রীমহাদেব ফিরে এসে যখন এই কাহিনী শুনলেন, তখন তিনি সরাসরি বিষ্ণুলোকে গিয়ে শ্রীবিষ্ণুকে অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও স্নেহভরে আলিঙ্গন করলেন।
গণপতির কানে ভিকবালি পরানোর প্রথা এই কাহিনী থেকেই শুরু হয়েছে বলে মনে হয়।
এই কাহিনীর আধ্যাত্মিক অর্থ ও প্রভাব আমরা আগামীতে দেখব।
![]() |
গৃহের গণপতির পুনর্মিলন মিছিলের মধ্যে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু |
No comments:
Post a Comment