Showing posts with label গণেশ ভক্তি. Show all posts
Showing posts with label গণেশ ভক্তি. Show all posts

Friday, 25 July 2025

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে - গণেশ ভক্তি - ভাগ - 3 - মোদ-ক

সদগুরু  অনিরুদ্ধ বাপুর  দৃষ্টিকোণ থেকে - গণেশ ভক্তি - ভাগ - 3 - মোদ-ক
সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুদ্বারা রচিত দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' পত্রিকার সম্পাদকীয় (০৬-০৯-২০০৬)

শ্রীগণেশের কথা মনে পড়লেই প্রত্যেক ভক্ত বা এমনকি নাস্তিকেরও প্রথমেই যে জিনিসটার কথা মনে পড়ে, তা হলো মোদক। আজকাল মাওয়ার মোদক পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মাওয়ার মোদক অনেকটা দুধের তৃষ্ণা ঘোলে মেটানোর মতো। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমি সবচেয়ে ভালোবেসে যে মোদক খেয়েছি, তা হলো আমাদের চিরাচরিত মোদক, যেখানে চালের গুঁড়ো মাখনে মেখে তৈরি করা হয় এবং ভেতরের পুরটা তাজা ও সুস্বাদু নারকেল কোরা দিয়ে বাড়িতে তৈরি করা ঘিয়ে ভাজা হয়। তার ওপর, মোদক খাওয়ার সময় সেটা ভেঙে আরও এক চামচ ঘি ঢেলে নেওয়া। সব বাচ্চাদের এই 'ঘিয়ে জবজবে' মোদকটা ভীষণ পছন্দের। এই চিরাচরিত মোদক হলো আহারের মধ্যে থাকা স্নিগ্ধ, সৌম্য (শান্ত) ও গুরু (গম্ভীর) গুণের চরম প্রকাশ। আর ঠিক এই কারণেই মূলাধার চক্রের নিয়ন্ত্রণকারী, অর্থাৎ অত্যন্ত উষ্ণ ও লঘু স্থানের অধিপতি শ্রীমহাগণপতির জন্য এটিই সর্বোত্তম নৈবেদ্য।

আজকের পরিস্থিতিতে হয়তো সবার পক্ষে এমন মোদক তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের উচিত এমন চিরাচরিত মোদক বানিয়ে অত্যন্ত ভালোবেসে শ্রীমহাগণপতিকে অর্পণ করা। দূর্বা ও শমী পত্রের বাহ্যিক পূজা এবং চিরাচরিত মোদকের নৈবেদ্য সত্যিই উগ্র, শুষ্ক ও লঘু গুণগুলিকে নষ্ট করে স্নিগ্ধতা, সৌম্যভাব (শান্তভাব) ও গুরুত্ত্ব (স্থিরতা) স্থাপন করে। এর ফলে, সেই মঙ্গলমূর্তি বরদাবিনায়ক বিঘ্ন নাশ করার জন্য প্রত্যেকের প্রাণময় দেহে ও মনোময় দেহে আবির্ভূত হন।
 
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
 
মোদক বললেই আমার একটা খুব পুরোনো গল্প মনে পড়ে যায়। এক সম্রাট ছিলেন। তিনি নিজে অত্যন্ত বিলাসী স্বভাবের ছিলেন এবং তিনি কোনোরূপ অধ্যয়ন করেননি। তাই তাঁর বাবা তাঁকে সিংহাসনে বসানোর সময়, সেই বিদ্যাহীন রাজপুত্রের বিয়ে একজন অত্যন্ত বিদূষী ও সুশিক্ষিত রাজকন্যার সঙ্গে দিয়েছিলেন। সেই মূর্খ রাজা ও তাঁর বিদূষী, পতিব্রতা রাণী পুরো রাজপরিবার নিয়ে এক সরোবরে জলকেলির জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে সরোবরে জলকেলি করার সময় রাজা রাণীর গায়ে হাত দিয়ে জল ছিটোতে লাগলেন। বিয়ের আগে পর্যন্ত সংস্কৃতই যাঁর পড়ার ভাষা ও বলার ভাষা ছিল, সেই রাণী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, "মোদকৈঃ সিঞ্চ"। তৎক্ষণাৎ রাজা এক সেবককে কাছে ডেকে তার কানে কিছু বললেন। কিছুক্ষণ পরেই সেবক মোদকে ভরা পাঁচ-ছয়টা পাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হলো এবং রাজা একের পর এক মোদক নিশানা করে রাণীর দিকে ছুঁড়তে লাগলেন। এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, রাণী কিছুক্ষণ পরেই নিজেকে সামলে নিলেন এবং অন্যান্য রাজনারী ও অমাত্যদের মুখের কুটিল হাসি দেখে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হলেন; কারণ রাণী বলতে চেয়েছিলেন, "মা উদকৈঃ সিঞ্চ" অর্থাৎ 'আমায় জল দিয়ে ভিজিয়ে দিও না'। কিন্তু শুধু বলতে পারার মতো সংস্কৃত জানা সেই মূর্খ রাজার সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম জানা না থাকায়, তিনি 'মোদকৈঃ' কথাটার সন্ধিবিচ্ছেদ না করেই ভুল অর্থ বুঝেছিলেন। এরপর গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়, কিন্তু আমার তো মনে হয়, রাণীর গায়ে মোদক ছুঁড়ে মারা সেই বোকা রাজাটাই আজকাল নানা রূপে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
 
মোদক নৈবেদ্য সমর্পয়ামি। (আমি মোদকের নৈবেদ্য ভক্তিসহকারে অর্পণ করছি।)
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত গণেশোৎসবে অপরিমেয় প্রেম ও ভক্তিসহকারে গণপতি বাপ্পাকে মোদকের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয়।

গণপতি মোদক ও দূর্বা ভালোবাসেন বলে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই জিনিসগুলি অর্পণ করাটাই নিয়ম। তেমনই, সেই পরমাত্মার রূপও অনেক, তাই বিভিন্ন ধরনের মূর্তি বানানোও অত্যন্ত সঠিক। কিন্তু সেই গণপতিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য জায়গায় জায়গায় লাইন দেওয়াটা তো সেই রাজারই পুনরাবৃত্তি। আমার একটা জিনিস মাথায় ঢোকে না যে, গণপতিকে যদি সত্যিই মোদক এতই প্রিয় হয়, তাহলে তিনি জায়গায় জায়গায় শুধু দুধই কেন পান করেন? মোদক কেন খান না? আর সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রশ্নটা আমাদের কারোর মনেও আসে না। সেই মঙ্গলমূর্তি পরমাত্মা ভক্তের ভালোবেসে দেওয়া সামান্য বাসি রুটির টুকরোও অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করেন, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। মূর্তির সামনে রাখা নৈবেদ্যের থালা থেকে যদি এক কণাও কম না হয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। গীতায় তো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে সমস্ত ভক্তদের এই আশ্বাস দিয়েছেন। আসল কথা হলো, পরমাত্মার এই সব করে নিজের মাহাত্ম্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তেমনই মানুষের মনে ভক্তি বাড়ানোর জন্যও তাঁর এই ধরনের পরিকল্পনার কোনো দরকার নেই। ভক্ত ও অভক্ত প্রত্যেকের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব সম্পর্কে যিনি অবগত এবং যাঁর হাতেই প্রত্যেকের কর্মফল নির্ধারিত, সেই সত্যিকারের পরমাত্মার এই সব অদ্ভুত জিনিসের কখনো প্রয়োজন হয় না।

সম্পাদকীয় শেষ করে সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখছেন -

'বন্ধুরা, সেই পরমাত্মা যা চান, তা হলো তোমাদের অচল শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিয়ে করা ভগবানের ও ভগবানের অসহায় সন্তানদের সেবা। এটাই আসল নৈবেদ্য, না, এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য। এই নৈবেদ্য পরমাত্মা পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং তার সহস্রগুণ ফল প্রসাদ হিসেবে ভক্তকে ফিরিয়ে দেন। মোদক নৈবেদ্য হিসেবে অবশ্যই অর্পণ করুন এবং নিজেও আনন্দের সাথে খান, কিন্তু 'মোদ' মানে যে 'আনন্দ' তা ভুলবেন না। পরমাত্মা ও অন্যদের আনন্দ হয় এমন আচরণ করাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মোদক।'

मराठी >> हिंदी >> English >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>>

Tuesday, 22 July 2025

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া! সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুদ্বারা রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষ পত্রিকার অগ্রলেখ (১৫-০৯-২০০৭)


ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়ির পরিবেশটা ছিল পুরো শুদ্ধ বৈদিক সংস্কারে ভরা, কিন্তু তাতে অনাবশ্যক নিয়ম, জাত-পাত, কিংবা গোঁড়া কর্মকান্ডের ছিটেফোঁটাও ছিল না। মাই (দিদিমার মা) আর দিদিমা সংস্কৃত সাহিত্যে এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে সব সংহিতা তাদের মুখস্থ ছিল। তাই বৈদিক মন্ত্রের শুদ্ধ আর ছন্দবদ্ধ উচ্চারণ সবসময় কানে আসত। আজও ওদের দুজনের গলার বৈদিক মন্ত্র আর সূক্তের মিষ্টি সুর আমার হৃদয়ে বেজে ওঠে। গণপতি পূজার পর যে মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি বলা হতো, সেটা আজকালকার ‘শর্টকাট’ মতো ‘ওঁ যজ্ঞেন যজ্ঞময়জন্ত....’ থেকে শুরু না হয়ে, ‘ওঁ গণানাম ত্বা গণপতীম হাবামাহে....’ থেকে শুরু হতো আর প্রায় আধ থেকে পৌনে এক ঘণ্টা ধরে চলত। তার মধ্যে আরোহণ, অবরোহণ, আঘাত, উদ্ধার ইত্যাদি সব নিয়ম মেনেও সেই মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলিতে মাধুর্য, কোমলতা আর সহজতা ঠিক তেমনই জীবন্ত থাকত, কারণ সেই মন্ত্রোচ্চারণে শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর কোনো ইচ্ছা ছিল না, বরং পুরো ভক্তিরসে ভরপুর এক প্রফুল্ল হৃদয় থাকত।

পরে আমার পাঁচ বছর বয়সে, আমার দিদিমার বাড়িতে অর্থাৎ পণ্ডিতদের বাড়িতে গণপতির সামনে ওঁরা দুজনেই আমাকে প্রথম মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলির শাস্ত্রীয় পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। তখন আমার মায়ের তিন কাকীমা, মা আর দিদিমা, এই পাঁচজন মিলে আমাকে বরণ করে অনেক মোদক খেতে দিয়েছিলেন। সেই সময় পর্যন্ত আমি আমার দিদিমার বাড়িতে একমাত্র নাতি ছিলাম, আর তাই পুরো পাধ্যে ও পণ্ডিত পরিবারের খুব আদরের ছিলাম। সেই দিনই মাই (দিদিমার মা) আমাকে পাধ্যে পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে বালগণেশের প্রতিস্থাপন পদ্ধতিও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আর সেই কারণেই আজও আমাদের বাড়িতে গণেশ চতুর্থীতে যে মূর্তি স্থাপন করা হয়, সেটা বালগণেশেরই হয়।

আমি একবার মাইকে (দিদিমার মা) জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘প্রতি বছর বালগণেশই কেন গো?’ মাই (দিদিমার মা) আমার গালে হাত বুলিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, “আরে বাপুরায়া, শিশু ঘরে এলে আমরা যদি তার যত্ন নিই, তাকে আদর করি, তাহলে সেই শিশুর পেছনে পেছনে তার মা-বাবাও চলে আসেন আর সুখে থাকেন। এই বালগণেশের প্রতি ভক্তদের আদর-যত্নের কারণে পার্বতী মাতা আর পরমশিবেরও আপনা আপনিই স্বাগত ও পূজা হয়ে যায়। আর দ্বিতীয়ত, অচেনা সাধারণ মানুষের ফুটফুটে ছোট বাচ্চার সাথে ব্যবহার করার সময়ও আমাদের মনে আপনা আপনিই এক নিষ্কাম প্রেম প্রকাশ পায়। তাহলে এই অত্যন্ত সুন্দর মঙ্গলমূর্তির বালরূপের সান্নিধ্যে ভক্তদের মনে ভক্তিপ্রেম তেমনই নিষ্কাম ও পবিত্র হবে না কি?”
 


মাইয়ের (দিদিমার মা)  এই অনুভূতিগুলো ছিল এক অত্যন্ত শুদ্ধ ও পবিত্র ভক্তিময় হৃদয়ের সহজ প্রবৃত্তি। আমরা সবাই, আক্ষরিক অর্থে কোটি কোটি মানুষ, গণপতিকে ঘরে বসাই, কেউ দেড় দিনের জন্য তো কেউ দশ দিনের জন্য। বিভিন্ন প্রকারের গণেশ মূর্তি থাকুক না কেন, কিন্তু এই বিঘ্নহন্তা গণেশের সাথে আমরা কি এমন আন্তরিক আর আপন একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করি?

ঘরে আসা গণপতিকে এই ভাবনাতেই কিছু জায়গায় আনা হয় এই ভেবে যে কেবল বাড়ির ঐতিহ্য যেন ভাঙা না হয়, ভাঙলেই বিপদ ঘটবে, কিছু জায়গায় মানত পূরণের জন্য আনা হয়, আবার কিছু জায়গায় শুধু উৎসব ও মজা করার জন্য আনা হয়। এমন গণপতি স্থাপনায় মন্ত্র থাকে, মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি থাকে, আরতি থাকে, মহানৈবেদ্য থাকে এবং রীতিনীতি ও শাস্ত্র পুরোপুরি পালনের ভয়ে দৌড়ঝাঁপও থাকে। কিন্তু এই সব গোলমালের মধ্যে যা হারিয়ে যায়, তা হলো এই আরাধনার মূল সার অর্থাৎ প্রেমময় ভক্তিভাব।

মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া ও সুখকর্তা দুঃখহর্তা, এই শ্রীগণপতির উপাধিগুলো সবারই জানা। বরং এই ‘সুখকর্তা দুঃখহর্তা’ উপাধির কারণেই তো আমরা গণপতিকে ঘরে আনতে রাজি হই, কিন্তু ‘মঙ্গলমূর্তি’ এই উপাধির কী হবে? সেই সিদ্ধিবিনায়ক সবকিছু মঙ্গলময় করবেনই, কিন্তু তাকে ঘরে আনার পর আমরা তাকে কতটা মঙ্গলময় পরিবেশে রাখি? এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

শুধু দূর্বার বড় বড় মালা পরিয়ে, একুশটি মোদক সকাল-সন্ধ্যা তার সামনে রেখে, লাল ফুল নিবেদন করে আর আরতির সময় তাল দিয়ে কি আমরা আমাদের মতো করে আর আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মাঙ্গল্য তৈরি করি? উত্তর বেশিরভাগ সময়ই ‘না’ হবে।

তাহলে সেই মঙ্গলমূর্তিকে আমাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ‘মাঙ্গল্য’ আমরা তাকে কিভাবে অর্পণ করতে পারি? উত্তর খুব সহজ আর সরল। সেই মূর্তিকে স্বাগত জানানোর সময় এই ভাবনা রাখুন যে এক বছর পর আপনার প্রিয়জন ঘরে ফিরে আসছে; একুশটি মোদকসহ নৈবেদ্যে ভরা থালা তার সামনে রেখে তাকে আদর করে অনুরোধ করুন, ঘরে আসা অতিথিদের আতিথ্যের আড়ম্বরের চেয়ে সেই গণেশের আরাধনার দিকে বেশি মনোযোগ দিন, আরতি বলার সময় কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন না আর প্রধানত এই মহাবিনায়ক যখন তার স্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হন, তখন হৃদয় যেন গদগদ হয়ে ওঠে এবং প্রার্থনা হোক অধিকারভরা ও প্রেমময়, ‘মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া, পরের বছর তাড়াতাড়ি এসো।’

অগ্রলেখের শেষে সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লেখেন -
‘আমার শ্রদ্ধাবান বন্ধুরা, ‘পরের বছর তাড়াতাড়ি এসো’, এই বাক্যটির অর্থ ভালোভাবে বুঝে নিন। আসার তারিখ তো ঠিক করাই থাকে, তাহলে শুধু মুখে ‘তাড়াতাড়ি এসো’ বলার পেছনে কী অর্থ থাকতে পারে? এতে একটাই অর্থ আছে আর তা হলো পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করবেন না, দেব মোরিয়া, আপনি রোজই আসতে থাকুন আর সেটাও তাড়াতাড়িই ঘটুক।’

Friday, 18 July 2025

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে গণেশ ভক্তি

আমরা যখন কোনো শুভ কাজ শুরু করি, তখন তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার জন্য আমাদের বিঘ্নহর্তা শ্রী গণেশকে স্মরণ করি, পূজা করি এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। ছোটবেলায় যখন আমরা অক্ষর লিখতে শিখি, তখনও আমরা প্রথমে 'শ্রী গণেশায় নমঃ' লিখতেই শিখি। যতই বিভিন্ন দেবতার মন্দির থাকুক না কেন, শ্রী গণেশ কিন্তু প্রতিটি মন্দিরের গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারে বিরাজমান থাকেনই। 'মঙ্গলমূর্তি শ্রী গণপতি' সত্যিই সমস্ত শুভ কাজের অগ্রগণ্য, আমাদের ভারতজুড়ে ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই এক প্রিয় দেবতা।

এই গণপতি সম্পর্কে, দৈনিক 'প্রত্যক্ষ'-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক ডাঃ শ্রী অনিরুদ্ধ ধৈর্যধর যোশী (সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু) তাঁর অধ্যয়ন ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণাগুলো অনেক সম্পাদকীয়র মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। এই সম্পাদকীয়গুলো কেবল তথ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভক্তদের মনের প্রশ্নের উত্তর দেয়, ভক্তিকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং গণপতির বিভিন্ন রূপের গভীরে পরিচয় করিয়ে দেয়।

এই সম্পাদকীয়গুলোতে বাপু বেদ, পুরাণ, সন্ত সাহিত্য থেকে গণপতির স্বরূপ এবং তার পেছনের দর্শন খুব সহজ, সরল ভাষায় উন্মোচন করেছেন। ব্রহ্মণস্পতি-গণপতি ধারণা, বিশ্বের ঘনপ্রাণ গণপতি, গণপতির জন্মকথার পেছনের তত্ত্ব, সার্বজনীন গণেশ পূজার পেছনের ভূমিকা, মূলাধার চক্রের অধিষ্ঠাতা গণপতি, গণপতির প্রধান নামগুলো, তাঁর বাহন মূষিকরাজ, ব্রতবন্ধের গল্প, মোদকের গল্প এবং সেই গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ... এই সমস্ত বিষয় বাপু এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন তিনি আমাদের মনের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

 

গণপতি এই দেবতাসম্পর্কিত এই ব্যাখ্যা শ্রদ্ধাবান ভক্তদের জন্য কেবল তথ্য নয়, বরং আবেগপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের শ্রদ্ধাকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত এই সম্পাদকীয়গুলো এখন ব্লগপোস্ট আকারে আমাদের সকলের জন্য উপলব্ধ হচ্ছে — বাপুদের দেওয়া সেই অমূল্য চিন্তাভাবনার সুবাস আমাদের সবার মনে ছড়িয়ে পড়ুক, এই একটিই উদ্দেশ্য নিয়ে।