![]() |
সূত্র - সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর দৈনিক প্রত্যক্ষে, সন্তশ্রেষ্ঠ শ্রী তুলসীদাসজি রচিত শ্রীরামচরিতমানসের সুন্দরকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে ‘তুলসীপত্র’ নামক অগ্রললেখমালার অগ্রলেখ সংখ্যা ৮৫৪ - (২৪-০৬-২০১২)। |
সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ তাঁর সুন্দরকাণ্ডের উপর লেখা ২৪-০৬-২০১২ তারিখের অগ্রলেখে, অর্থাৎ তুলসীপত্র ৮৫৪-তে, ‘ব্রহ্মর্ষি শ্যাবাশ্ব আত্রেয়’ কর্তৃক ‘উদ্দালক’-কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৮তম সূক্ত, যা ‘আদ্যব্রহ্মণস্পতি সূক্ত’ নামে প্রসিদ্ধ, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন, যা বোঝা খুব সহজ।
![]() |
মাঘী গণেশোৎসবে, শ্রী গণেশ মূর্তি শ্রী গণপতি অথর্বশীর্ষের পাঠ স্থানে বিরাজমান |
তুলসীপত্র-৮৫৪
সুনত বিনীত বচন অতি কহ কৃপাল মুসুকাই।
জেহি বিধি উত্তরৈ কপি কাটকু তাত সো কহহু উপাই॥ ৩৩৪॥
(অর্থ: সমুদ্রের অত্যন্ত বিনয়ী কথা শুনে কৃপালু শ্রীরাম হেসে বললেন, “হে তাত! যে উপায়ে বানরদের সেনা সমুদ্র পার হতে পারে, সেই উপায় বলুন।”)
৯ কিরাত কাল -
উদ্দালককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে, ব্রহ্মর্ষি শ্যাবাশ্ব আত্রেয় ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৮তম সূক্ত, যা ‘আদ্যব্রহ্মণস্পতি স্তোত্র’ নামে পরিচিত, তা পাঠ করতে ও বোঝাতে শুরু করলেন।
সূক্ত ১৮
(১) সোমানং স্বরণং কৃণুহি ব্রহ্মণস্পতে কক্ষীবন্তং যঃ ঔশিজঃ॥
হে জ্ঞানের স্বামী ব্রহ্মণস্পতি! আপনি যেমন ঔশিজ কক্ষীবানকে তেজস্বী করে তাঁর পরমোৎকর্ষ সাধন করেছিলেন, তেমনি আপনার জন্য স্তোত্র পাঠকারী আমার মতো সামান্য ভক্তকেও প্রগতির পথে নিয়ে যান।
(২) যঃ রেওয়ান্ যঃ আমীবহা বসুবিত্ পুষ্টিবর্ধনঃ সঃ নঃ সিশুক্তু যঃ তুরঃ॥
হে ব্রহ্মণস্পতি! তুমি ‘রেওয়ান্’ অর্থাৎ যেকোনো ঐশ্বর্যদাতা, তুমি ‘বসুবিত্’ অর্থাৎ মহাদানশীল, তুমি ‘পুষ্টিবর্ধন’ অর্থাৎ বলবর্ধক এবং ‘তুরঃ’ অর্থাৎ দ্রুতকর্মা। তাই আমাদের উপর শীঘ্র কৃপা কর।
(৩) মা নঃ শংসঃ অররুষঃ ধূর্তিঃ প্রণঙ্ মর্ত্যস্য রক্ষ নঃ ব্রহ্মণস্পতে॥
হে ব্রহ্মণস্পতি! দুরাচারী ও ধূর্ত শত্রুদের কথা এবং তাদের দুষ্কর্মের দ্বারা আমাদের যেন কোনো বাধা না আসে, আমাদের সবদিক থেকে রক্ষা করুন।
(৪) সঃ ধ বীরঃ ন রিষ্যতি যং ইন্দ্রঃ ব্রহ্মণস্পতিঃ সোমঃ হিনোতি মর্ত্যম্॥
যে মানুষটির প্রতি ব্রহ্মণস্পতি-সহ ইন্দ্র ও সোম কৃপা করেন, সে কখনো বিনষ্ট হয় না, দুর্বল হয়
না ।
(৫) ত্বং তং ব্রহ্মণস্পতে সোমঃ ইন্দ্রঃ চ মর্ত্যম্ দক্ষিণা পাতু অংসসঃ॥
হে ব্রহ্মণস্পতি! তুমি নিজে ইন্দ্র, সোম এবং দক্ষিণা (দক্ষ প্রজাপতির কন্যা) সহ ভক্তকে পাপ থেকে রক্ষা কর, এই প্রার্থনা করছি।
(৬) সদসঃ পতিং অধ্ভুতং প্রিয়ং ইন্দ্রস্য কাম্যং সনিং মেধাম্ অয়াসিষং॥
হে ব্রহ্মণস্পতি! তুমি সমস্ত সদনের অধিপতি; অর্থাৎ যেখানে যেখানে সমাজগঠন হয়, তার সংহতভাবের নিয়ন্ত্রক তুমি। তাই তুমি সকল ভক্তসংঘের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারো। তুমি কিরাতরুদ্রের অতি প্রিয়। আমার মেধা অর্থাৎ বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হোক এই প্রার্থনা করছি।
![]() |
শ্রীঅনিরুদ্ধগুরুক্ষেত্রমে অধিষ্ঠিত শ্রীচণ্ডিকাকুল এবং শ্রীমুলার্ক গণেশ |
(৭) যস্মাৎ ঋতে ন সিধ্যতি যঃ বিপশ্চিতঃ চ ন সঃ ধীনাং যোগং ইন্বতি॥
যাঁর সাহায্য ও আশ্রয় ছাড়া তপস্বীদের তপস্যা, গায়ত্রী উপাসকদের যজ্ঞ এবং বিদ্বানদের জ্ঞানসাধনা সফল হতে পারে না, সেই ব্রহ্মণস্পতি শ্রদ্ধাবানদের প্রজ্ঞাকে নিরন্তর প্রেরণা দিয়ে চলুন।
এই ঋচাকে ‘জ্ঞানসাধনাগায়ত্রী’ বলা হয় এবং এর অনুুষ্ঠানে তিনটি জিনিস সিদ্ধ হয়।
ক) সাধকের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী হয়।
খ) তার অর্থ বোঝার ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
গ) সে যতই জ্ঞানী হোক না কেন, চণ্ডিকাকুলের প্রতি নম্র ও শরণাগতই থাকে।
(৮) আৎ ঋধ্নোতি হবিষ্কৃতিং প্রাঁচং কৃণোতি অধ্য্বরং হোত্রা দেবেষু গচ্ছতি॥
মহান ব্রহ্মণস্পতি যজ্ঞকারী ও কৃষকদের সদা উন্নতি ঘটান। তিনি সকল যজ্ঞ সফল করেন। তিনি আমাদের ভক্তির ভাষাকে অর্থবহ করেন।
(৯) নরাশংসং সুধৃষ্টমং অপশ্যং স প্রথস্তমং দিবঃ ন সদ্ম-মখসং॥
সূর্যের চেয়েও তেজস্বী, অত্যন্ত পরাক্রমী, যেকোনো কাজ সহজে সম্পন্নকারী, ভক্তদের অত্যন্ত প্রিয় এবং মানবদের দ্বারা সর্বদা প্রথম পূজিত ব্রহ্মণস্পতিকে আমি দেখলাম এবং তাঁর দর্শনে তৃপ্ত হলাম।
অগ্রলেখের শেষে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখেছেন -
‘আমার প্রিয় শ্রদ্ধাবান বন্ধুরা, আমরা অষ্টবিনায়ক পূজা ও দর্শনের সময় কিরাত-রুদ্রপুত্র ব্রহ্মণস্পতি ও পরমশিবপুত্র গণপতির একাত্মতার সাক্ষাৎকার ঘটানো গৌরীপুত্র স্বরূপকে পূজা করি।’
![]() |
সদগুরু শ্রী অনিরূদ্ধ বাপু মাঘী গণেশোৎসবের সময় অষ্টবিনায়কের দর্শন নিচ্ছেন |
Comments
Post a Comment