আমি বিশালসিংহ বাহেকর, বোরিভলি (প.) উপাসনা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে আমি ‘ক্যাপজেমিনি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’-এ প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত রয়েছি। ২০০১ সাল থেকে আমি বাপুজির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমি বাপুজির সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হলাম, সেই অভিজ্ঞতা আজ সংক্ষেপে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
২০০১ সালে আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষে ছিলাম। শুরু থেকেই আমি প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতাম এবং আমাকে কখনও ‘কে.টি.’ (মানে কোনও বিষয়ে অকৃতকার্য হলে সেই পরীক্ষাটি আবার দিতে হয়) দিতে হয় নি। আমার ফল সবসময় ভালোই হতো। আমার কলেজ ছিল ভিলে পার্লের বিখ্যাত ‘ডি. জে. সাংভি কলেজ’। তাই আমি ভেবেছিলাম ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকে সহজেই চাকরি পাব। কিন্তু প্রত্যেকবার পরীক্ষা দিয়ে শেষ ধাপ পর্যন্ত পৌঁছেও আমার নির্বাচন হতো না। আমার সব বন্ধুরাই নির্বাচিত হয়েছিল এবং তাদের এল.এন.টি., সি.এম.সি.-র মতো বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি হয়েছিল, কিন্তু আমাকে প্রতিবারই শেষ ধাপ থেকে বাদ দেওয়া হতো।
মনে অনেক প্রশ্ন আসতে লাগল—শুরু থেকেই প্রথম শ্রেণী পাওয়া সত্ত্বেও আমার সঙ্গে এমন কেন হচ্ছে? এর ফলে মনে হতাশা বাড়তে লাগল। আমার বন্ধুরা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও হতাশা আরও বাড়ল। অবশেষে ২ জুন ২০০১-এ শেষ ইন্টারভিউ শেষ হলো। সেদিন শনিবার ছিল এবং সেদিনই আমি প্রথমবার বাপুজির উপাসনা কেন্দ্রে গেলাম। সেখানকার ভক্তিময় পরিবেশ আমার মনে গভীরভাবে ছুঁয়েছিল। ধীরে ধীরে আমার বাপুর প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো এবং তখন আমার হাতে কাজ না থাকায় আমি উপাসনা কেন্দ্রের কাজে অংশ নিতে শুরু করলাম।
ক্রমশই বাপুজি সম্পর্কে আমি আরও জানতে পারছিলাম। দিন কেটে যাচ্ছিল, অনেক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম কিন্তু কোথাও থেকে উত্তর পাচ্ছিলাম না। বাপুভক্ত প্রসাদ সিংহ চৌবল আমার সহপাঠীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তার মা বললেন, “তুমি তোমার সমস্যার কথা লিখে দাও, আমরা সেটা সুচিতদাদার কাছে পাঠাব। তুমি সঠিক উত্তর পেয়ে যাবে।” তখন ব্যক্তিগত প্রশ্ন গ্রহণ করা হতো। আমিও চাকরি সম্পর্কিত সমস্যাটি লিখে দিলাম।
আমি মাত্র তিনটি প্রশ্ন লিখেছিলাম—
১) আমি কি এম.ই. করব? (কারণ জানুয়ারিতে ‘গেট’ পরীক্ষা ছিল।)
২) গেট দিয়ে এম.ই. করব, নাকি এম.বি.এ. করব?
৩) নাকি আমি আরও চাকরি খুঁজব?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০০২-এ উত্তর এসেছিল যে “চাকরি খুঁজতে থাকো।” আমি ভেবেছিলাম উত্তর আসবে যে “পড়াশোনা চালিয়ে যাও।” কিন্তু আমাকে যেমন বলা হয়েছিল তেমনই আমি চাকরি খুঁজতে থাকলাম। আর কয়েক দিনের মধ্যেই, ১৫ মার্চে আমি চাকরি পেলাম। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন থেকে আমি আবেদন করেছিলাম এবং আমার নির্বাচন হলো।
শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যেই বাপুজির কৃপায় এটাও বুঝলাম কেন আমাকে “চাকরি খুঁজতে থাকো” এই উত্তর দেওয়া হয়েছিল। আমার আগে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকে নির্বাচিত সব বন্ধুদের পোস্টিং হয়েছিল মুম্বাইয়ের বাইরে, কিন্তু আমাকে মুম্বাইতেই একটি কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া হলো!
সদগুরু কিছু জিনিস দেরিতে দেন, কিন্তু সেই দেরির পেছনেও থাকে তাঁর বড় উদ্দেশ্য। সেটাই তাঁর অকারণ করুণা, যা আমি আট মাস পরে বুঝতে পেরেছিলাম। আট মাস পর আমি প্রথম চাকরি পেলাম এবং তারপর আর আমাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের দিকে আমার কাছে অনেক চাকরি আসতে লাগল।
বাপুজি প্রত্যেকের জন্য কিছু না কিছু করেনই, তবে তা অনেক সময় আমাদের বোধগম্যের বাইরে থাকে। আমরা কল্পনাও করিনি এমন ভালো জিনিস আমাদের সঙ্গে ঘটে যায়। এটাই প্রতিটি ভক্তের উপর তাঁর অকারণ করুণা। এই অভিজ্ঞতার ফলে আমার বাপুজির উপর বিশ্বাস আরও দৃঢ় হলো এবং আমি বাপুজির কাজে আরও সক্রিয় হতে লাগলাম। এটাই ছিল ২০০১ সালে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।
এখন আমি দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটি বলি।
নাগপুরে আমাদের একটি ‘রো হাউস’ আছে। আমার বাবা এবং ভাইয়ের পরিবার সেখানে থাকেন। আমার বাবা ব্যাংকের কাজের সূত্রে বছরে এক বা দুবার মুম্বই আসেন। সেইভাবেই তিনি গত মাসে আমার ভাইয়ের সঙ্গে মুম্বই এসেছিলেন। আমার বৌদি তখন তার বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাই আমাদের নাগপুরের বাড়ি বন্ধ ছিল। রবিবার, ১৪ জুলাই নাগপুরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। এই সময়ে সেই বাড়িতে চোর ঢুকে পড়ে এবং বাড়ির প্রধান দরজা ও পেছনের দরজা ভেঙে দেয়। রো-হাউসটি দো তলা বিশিষ্ট। চোরেরা দুটি তলাতেই গিয়ে প্রতিটি জিনিস খোলাখুলি করে সব মূল্যবান সামগ্রী ও টাকা একটি থলেতে ভরে নেয়... কিন্তু...!
এখানে, যদি কোনো বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে চুরি হয়, তাহলে আশেপাশের লোকজনের পক্ষে সঙ্গে সঙ্গেই টের পাওয়া সম্ভব। কিন্তু রো-হাউসে চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। এখানেও বাপুজিই আমাদের সাহায্য করলেন। রাস্তার ওপারের সামনের বাড়ির ছাদ থেকে সেখানকার লোকেরা দেখেন যে আমাদের বাড়ি খোলা। তাদের কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি মনে হতেই তারা আমার ভাইকে ফোন করে। যখন জানতে পারে যে আমার ভাই আমার বাবার সঙ্গে মুম্বইতে আর বৌদি বাবার বাড়িতে আছেন, তখন তারা সন্দেহ প্রকাশ করে যে আপনাদের বাড়িতে হয়তো চুরি হয়েছে। ভাই ফোন করার পর আমার বৌদি তৎক্ষণাৎ বাড়ি পৌঁছান। আর গিয়ে কী দেখেন! সব জিনিস এলোমেলো! কিন্তু... চোরেদের চুরি করা সমস্ত মূল্যবান জিনিস টাকা, গয়না এবং অন্যান্য জিনিসপত্র হলঘরের সোফাতেই পড়ে ছিল! আসলে হয়েছিল কী, ভাইয়ের মেয়ের খেলনা একটি ব্যাগে সেই সোফায় রাখা ছিল। চোরেরা চুরি করা জিনিস একটি ব্যাগে ভরে সোফায় রেখেছিল এবং পালানোর সময় তাড়াহুড়োয় ভুল করে তারা ঐ খেলনার ব্যাগ নিয়ে পালায়।
আমার বিশ্বাস এ সবই বাপুজিরই লীলা ছিল। বাড়িতে চোর ঢুকলেও তিনি আমাদের কিছুই ক্ষতি হতে দিলেন না। আমরা মানি, বাপুজিই আমাদের বাড়ির রক্ষা করেছিলেন।
মুম্বাই কোথায় আর নাগপুর কোথায়—দুটো জায়গার মধ্যে শত শত মাইলের দূরত্ব। কিন্তু সদগুরুতত্ত্বের কাছে দূরত্বের কোনও মানেই নেই। তাই আমাদের বাড়ি রক্ষা পেল।
এটাই হলো বাপুজির করুণা, যা প্রতিটি শ্রদ্ধাবানের উপর চিরকাল বর্ষিত হতে থাকে।
আমি বাপুজির নিকট ঋণী এবং সর্বদা তাই হয়েই থাকব।
Comments
Post a Comment