সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধের ভাববিশ্ব থেকে - মাতা পার্বতীর নবদুর্গারূপের পরিচয় - পর্ব ১

সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধের ভাববিশ্ব থেকে - মাতা পার্বতীর নবদুর্গারূপের পরিচয় - পর্ব ১

গণেশজিকে, এই বুদ্ধিদাতা বিনায়ককে অনন্তচতুর্দশীতে বিদায় জানাতে গিয়ে মনে হালকা বিষণ্ণতা জাগে। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের হৃদয়ের শ্রদ্ধাকে নবচৈতন্যে ভরিয়ে, ভক্তি ও উৎসাহের এক নবতর অভিযাত্রা শুরু হয়— সেটিই আশ্বিন নবরাত্রি। 

আশ্বিন নবরাত্রির শেষে অর্থাৎ দশমীতে শ্রীরাম রাবণকে বধ করেছিলেন, অশুভের বিনাশ হয়েছিল, তাই এই নবরাত্রিকে সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ ‘অশুভনাশিনী নবরাত্রি’ বলেছেন।

এই নবরাত্রিতে মাতা জগদম্বার বিভিন্ন রূপের পূজা-অর্চনা করা হয়। একইভাবে, ভারতের অনেক জায়গায় এই নয় দিন ভক্তমাতা পার্বতীর নয়টি রূপের, অর্থাৎ শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী রূপের ভক্তিভরে পূজা-অর্চনা করা হয়। মাতা পার্বতীর এই রূপগুলোকেই আমরা ‘নবদুর্গা’ নামে চিনি।

দৈনিক প্রত‍্যক্ষের সম্পাদকীয়গুলোর মাধ্যমে, খুব সহজে ও সরল ভাষায়, সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ তার গভীর অধ্যয়ন ও চিন্তাভাবনা থেকে এই নবদুর্গার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন; এই সম্পাদকীয়গুলো শুধু তথ্য দেয় না, বরং ভক্তিকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং নবদুর্গার সঠিক পরিচয় তুলে ধরে।

আজ থেকে এই সম্পাদকীয়গুলোর উপর ভিত্তি করে ব্লগপোস্ট আপনাদের সবার জন্য নিয়ে আসছি। আমরা সবাই ভক্তি ও শ্রদ্ধার এই যাত্রায় শামিল হই।

সূত্র - সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপুর দৈনিক প্রত‍্যক্ষে ‘তুলসীপত্র’ নামক সম্পাদকীয় সিরিজের ১৩৮০ এবং ১৩৮১ নং সম্পাদকীয়।

সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপু ‘তুলসীপত্র-১৩৮০’ নামক সম্পাদকীয়তে লেখেন, 

ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা যখন মূলার্কগণেশের সত্যযুগের স্থাপনার কথা বলে শেষ করলেন, তখন তিনি মাতা পার্বতীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়েছিলেন।

তখন সেই অন্নপূর্ণা পার্বতী লোপামুদ্রাকে বললেন, “হে ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা! কী সুন্দরভাবে এই গল্পটি তুমি বলেছ!

শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার প্রথম কক্ষ সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে এই গল্পটি বলে তুমি শ্রদ্ধাবানদের জন্য এই প্রথম ধাপটিতে ওঠা খুব সহজ করে দিয়েছ।”

শিব-ঋষি তুম্বুরু অত্যন্ত প্রেমভাব সহকারে ভক্তমাতা পার্বতীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মাতা! ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা তার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এই প্রথম ধাপের অনেক কিছু কেবল তুমিই ব্যাখ্যা করতে পারো। কারণ ‘দাক্ষায়ণী সতী’ ও ‘হিমালয়কন্যা পার্বতী’ - তোমার এই দুটি জন্মেই তুমি এই  শাম্ভবীবিদ্যার প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত সঠিকভাবে পেরিয়ে তপস্যা করেছ, এবং তা-ও মানবরূপে এসে সূক্ষ্ম পরমশিবকে পাওয়ার জন্য;

এবং তোমার এই তপস্যার কারণেই তোমার ও শিবের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এবং স্কন্দ ও গণপতির জন্ম হয়েছে।”

দেবর্ষি নারদ শিব-ঋষি তুম্বুরুর কথায় পুরোপুরি সায় দিলেন এবং বললেন, “হে ভক্তমাতা পার্বতী! তুমি স্বয়ং শিবের কাছ থেকে এই শাম্ভবীবিদ্যা তোমার তপস্যার শেষে পুনরায়  ফিরে পেয়েছ, এবং তাই তুমি নিজেই শাম্ভবীবিদ্যার প্রথম দীক্ষিত, প্রথম উপাসক এবং প্রথম কর্মশীলা।

পরমশিব তোমাকে শাম্ভবীবিদ্যার প্রতিটি সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি গভীরভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তাই আমি সবার পক্ষ থেকে তোমাকে প্রার্থনা করছি যে ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা শাম্ভবীবিদ্যা বোঝানোর সময়, যখন তোমার ইচ্ছে হবে, তুমি আমাদের সবার মনের কথা বুঝে নিজে থেকে বলা শুরু করো।

হে পার্বতী! তুমি আদিমাতার এমন এক অসাধারণ কন্যা, যার প্রতিটি কাজে ‘শাম্ভবীবিদ্যা’ই একমাত্র পথ এবং এই কারণেই শাম্ভবীবিদ্যার তপস্যায় তোমারই নয়টি রূপ  নবদুর্গা  হিসেবে বিখ্যাত। 

১) শৈলপুত্রী 

২) ব্রহ্মচারিণী 

৩) চন্দ্রঘণ্টা

৪) কুষ্মাণ্ডা 

৫) স্কন্দমাতা 

৬) কাত্যায়নী 

৭) কালরাত্রি 

৮) মহাগৌরী

৯) সিদ্ধিদাত্রী।”

এরপর সমস্ত ঋষিগণের দিকে ফিরে দেবর্ষি নারদ বললেন, “পার্বতীর এই নয়টি রূপের পূজা নবরাত্রিতে প্রতিদিন এক একটি করে করা হয়।

কারণ, যেমন ‘শ্রীসূক্ত’ ভক্তমাতা লক্ষ্মী ও আদিমাতা মহালক্ষ্মীর সম্মিলিত স্তোত্র, তেমনি ‘নবরাত্রিপূজন’ ভক্তমাতা পার্বতী ও আদিমাতা দুর্গার সম্মিলিত পূজা

এবং এই নবদুর্গাদের মধ্যে ‘ব্রহ্মচারিণী’ রূপটি তো শ্রীশাম্ভবীবিদ্যারই আচারপ্রতীক ।

তার তপস্যার শেষে পরমশিবকে পাওয়ার পরই তিনি তার স্বামীর কাছে কেবল দুটি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন - ১) শিবের প্রতি তার ভালোবাসা যেন অখণ্ড ও অক্ষয় হয় এবং ২) পরমশিবের মতোই তার প্রতিটি কাজও যেন আদিমাতার সেবার জন্য হয়।

শিবের কাছে এই বর চাইতে গিয়ে এই পার্বতী পরমশিবের সঙ্গে এবং তার ‘আদিমাতার সন্তান’ হওয়ার ভাবের সঙ্গে এত একাত্ম হয়েছিলেন যে তিনি সম্পূর্ণরূপে শিবময়ী হয়ে গেলেন এবং সেই কারণেই জন্মগতভাবে শ্যামবর্ণা এই পার্বতী শুভ্র ‘মহাগৌরী’ এবং বৃষভবাহিনী হয়ে গেলেন

এবং আদিমাতা পার্বতীর এই প্রেমকে সম প্রেম সহকারে গ্রহণ করে পার্বতীকে ‘সিদ্ধিদাত্রী’ অর্থাৎ মহাদুর্গার নিজেরই সিদ্ধেশ্বরী  রূপের সহজ রূপটি দিলেন

এবং সেই সময়েই ঘোষণা করা হলো যে সেই সিদ্ধিদাত্রী পার্বতীই ‘শাম্ভবীবিদ্যার প্রতিমূর্তি’।”

দেবর্ষি নারদের এই ভক্তবৎসল কথা শুনে পার্বতী আদিমাতার অনুমতি নিয়ে সিদ্ধিদাত্রী রূপ ধারণ করলেন এবং কথা শুরু করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু শিব-ঋষি তুম্বুরু অত্যন্ত বিনীতভাবে ও প্রেমের সঙ্গে তাকে মাঝখানে থামিয়ে প্রথমে সমস্ত শ্রদ্ধাবানদের ‘নবদুর্গা’ রূপের পরিচয় দিলেন -

সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপু ‘তুলসীপত্র-১৩৮১’ নামক সম্পাদকীয়তে লেখেন, 

পার্বতীর ‘নবদুর্গা’ রূপের পরিচয় জানার সময় কৈলাসের সবাই এতটাই আনন্দিত ও উৎসাহিত হয়েছিলেন যে সেখানে যেন আনন্দের সাগর নেমে এসেছিল।

এবার আবার ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা বলতে শুরু করলেন, “হে শ্রেষ্ঠ ঋষিবর ও শ্রদ্ধাবানগণ ! শাম্ভবীবিদ্যার উপাসনা প্রথম ধাপ থেকে আঠারোতম ধাপ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে করার জন্যই  মূলার্কগণেশের  উপাসনা বলা হয়েছে।

কারণ শাম্ভবীবিদ্যার উপাসনা করার সময় কোনো ভুল করা চলে না, অর্থাৎ আহার, বিহার, আচার, বিচার - কোনো কিছুতেই ভুল করা চলে না এবং শ্রীমূলার্কগণেশের মন্ত্র পাঠ করলে এই ভুলগুলো হয়ই না, বা যদি কিছু ভুল হয়েও যায়, তবে তা তৎক্ষণাৎ দূর হয়ে যায়।

শ্রীমূলার্কগণেশমন্ত্র :-

ॐ গং গণপতে শ্রীমূলার্কগণপতে বরবরদ শ্রীআধারগণেশায় নমঃ।

সর্ববিঘ্নান নাশায় সর্বসিদ্ধিং কুরু কুরু স্বাহা॥

শাম্ভবীবিদ্যার প্রথম ধাপে আদিমাতা ও ত্রিবিক্রমের শরণাপন্ন হওয়ার সময় প্রথমে মূলার্কগণেশের এই মন্ত্রটি প্রতিদিন অন্তত ৫ বার পাঠ করা উচিত।” 

তাকে মাঝখানে থামিয়ে ব্রহ্মবাদিনী কাত্যায়নী (ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যের প্রথম স্ত্রী) অত্যন্ত বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন, “হে জ‍্যেষ্ঠা ভগিনী লোপামুদ্রা! মূলার্কগণেশের এই মন্ত্রটি কি কেবল শাম্ভবীবিদ্যার উপাসকদেরই পাঠ করা উচিত? অন্য শ্রদ্ধাবানেরা কি এটি পাঠ করতে পারবে না?”

সিদ্ধিদাত্রী পার্বতী অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখে ব্রহ্মবাদিনী কাত্যায়নীর দিকে তাকালেন, “হে প্রিয় কন্যা কাত্যায়নী! তোমার স্বামীর মতোই তুমি সব সময় সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য চিন্তিত থাকো। তাই আমি তোমার কাছ থেকে এই প্রশ্নটি আশা করেছিলাম।

হে কাত্যায়নী! শোনো, এই মূলার্কগণেশের মন্ত্রটি যেকোনো শ্রদ্ধাবান পাঠ করতে পারেন, এতে কোনো বাধা নেই। এর জন্য শাম্ভবীবিদ্যার উপাসক হওয়ার কোনো শর্ত নেই।

কারণ, যদি ভালোভাবে দেখা যায়, প্রতিটি শ্রদ্ধাবান যখন চণ্ডিকাকুলের সঙ্গে জীবনযাপন করেন, তখন তিনি শাম্ভবীবিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের উপাসক হয়েই থাকেন

এবং শুধু তাই নয়, আদিমাতার প্রতি অপরিসীম ভক্তি রাখেন এমন শ্রদ্ধাবানের কাছ থেকে এই আদিমাতা তার উন্নতি অনুযায়ী কোনো না কোনো জন্মে তার কাছ থেকে শাম্ভবীবিদ্যা-উপাসনা কোনো না কোনো উপায়ে করিয়ে নেন।”

ভক্তমাতা পার্বতীর এই উত্তর শুনে সমস্ত ঋষিকুমার ও শিবগণ অত্যন্ত উৎসাহিত হলেন এবং পরের অংশ শোনার জন্য আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলেন।

লোপামুদ্রা :- “শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার দ্বিতীয় ধাপ হলো ‘আদিমাতা চণ্ডিকা থেকেই সমগ্র বিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে এবং সেই কারণেই এই বিশ্ব সম্পর্কে তিনি যতটা জানেন, ততটা আর কেউ জানতে পারে না’ - এই সত্যটি সব সময় মনে রেখে প্রতিটি কাজ করে যাওয়া। 

সাধারণ দৈনন্দিন জীবনের কাজ করার সময়ও, সাধনা করার সময়ও, অন্যান্য বিশেষ কাজ করার সময়ও এবং যখন কোনো ভুল হয়, তখনও মনে রাখতে হবে যে ‘এই আদিমাতা সেই মুহূর্তে সবকিছু জানতে পারেন’।

ধরো! সাধকের মনে কোনো ভালো-মন্দ চিন্তা এলো, সাধনায় কোনো ভুল হলো বা হাতে কোনো বড় ভুল হয়ে গেল, তবুও শাম্ভবীবিদ্যার সাধকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই এবং ভয় পাওয়ার তো কোনো দরকারই নেই।

সেই শ্রদ্ধাবান সাধককে কেবল অত্যন্ত খোলা মনে নিজের মনের মধ্যেই আদিমাতা ও ত্রিবিক্রমকে যা মনে আসে তা বলতে হবে এবং ৫ বার  ‘অম্বজ্ঞ’ বলতে হবে।”

এখানে নিজেকে আটকাতে না পেরে এক ঋষিকুমার অত্যন্ত অবাক হয়ে এবং প্রেমভাব নিয়ে বলে উঠলেন, “কী! এটা এত সহজ!”

লোপামুদ্রা অত্যন্ত বাৎসল্যের সঙ্গে সেই ঋষিকুমারের দিকে তাকালেন, “হ্যাঁ! তবে তুমি যে সহজ, সরল ও নিষ্পাপভাবে এই প্রশ্নটি করলে, ঠিক সেভাবেই সবটা বলতে হবে, এইটুকুই।”

কিন্তু তবুও সেই ঋষিকুমার আরেকটি প্রশ্ন করতে চাইলেন। তবে এবার তিনি নিয়ম মেনে অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন করলেন, “হে ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা! আপনাদের সবার স্নেহ দেখে আমার প্রশ্ন করার সাহস হচ্ছে।

আমার ভেতরে আজও অনেক অপূর্ণতা, অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। নানা ভয় আর অযথা চিন্তার ছায়া কখনো কখনো মনকে গ্রাস করে ফেলে। আমি এখনো কাম, ক্রোধ ইত্যাদি ষড়রিপু থেকে মুক্ত হতে পারিনি।

আসলে আমি এখন আর ‘ঋষিকুমার’ নই, বরং গুরুকুলের নিয়ম অনুযায়ী ‘ঋষি’ হয়েছি এবং সেই কারণেই আমার শাম্ভবীবিদ্যার উপাসনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে এবং একই সাথে ভয়ও লাগছে।

আমার মধ্যে থাকা এই তামসী তমোগুণ দূর করার জন্য কি আমি শাম্ভবীবিদ্যার উপাসনা করতে পারব?”

ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা সেই ঋষিকুমারকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে বৎস! তুমি যে আকুলতা নিয়ে এই প্রশ্নটি করছ, সেই আকুলতাই  শাম্ভবীবিদ্যার দ্বিতীয় ধাপে অত্যন্ত জরুরি।

এবং এটি মনে রেখো যে তোমরা সবাই প্রথম ধাপটি আগেই ধরে ফেলেছ এবং সেই কারণেই আমি তোমাদের পরের ধাপগুলো বোঝাতে পারছি।

হে উপস্থিত সমস্ত শ্রদ্ধাবানেরা! শিব-ত্রিপুরাসুর যুদ্ধের গল্পটি শাম্ভবীবিদ্যারই কাহিনীরূপ এবং সেই ইতিহাসের তোমরা প্রত্যেকেই একজন অংশ ছিলে।”

তার এই কথা শুনে সেই ঋষিকুমার অত্যন্ত বিনীতভাবে তার পায়ে মাথা রেখে দাঁড়ালেন এবং সেই সময় তার মুখ সূর্যের উদীয়মান কিরণের মতো ঝলমল করছিল।

তার মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত ঋষিকুমার ও শিবগণ আশ্চর্য প্রকাশ করতে লাগলেন এবং এটা দেখে লোপামুদ্রা তাকে প্রশ্ন করলেন, “তোমার মুখে এই বালার্ক-কিরণের মতো তেজ ছড়িয়ে পড়েছে, এর কারণ কি তুমি জানো?”

সেই ঋষিকুমার অত্যন্ত বিনীতভাবে ‘না’ উত্তর দিলেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই ব্রহ্মর্ষি কশ্যপ উঠে দাঁড়ালেন, “হে জ্যেষ্ঠা ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা! এই ঋষিকুমারের নাম ‘গৌতম’। এই নামকরণ আমিই করেছি। কারণ এর স্বভাব দুপুরের প্রখর সূর্যের মতো এবং সে তার তপস্যাও সেই প্রখরতার সঙ্গেই করেছে।

কিন্তু সে নিজের ব্যাপারেও এতটাই কর্তব‍্যকঠোর যে সে নিজের সামান্যতম ভুলও ক্ষমা করে না এবং তার প্রায়শ্চিত্ত করতে থাকে আর সে ‘সূর্যকিরণ’ বিজ্ঞানের একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছে। তার এই প্রখর সত্যনিষ্ঠ, নীতিনিষ্ঠ ও ধর্মনিষ্ঠ স্বভাবের কারণেই আমি তাকে ‘গৌতম’ (গৌ=সূর্যকিরণ) এই নামটি দিয়েছি।

হে প্রিয় শিষ্য গৌতম! তোমার আকুলতাও ঠিক এমনই প্রখর এবং সেই কারণেই তোমার মুখে এই সূর্যের তেজ ছড়িয়ে পড়েছে।”

ঋষি গৌতম ভক্তমাতা পার্বতীকে অত্যন্ত বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে ভক্তমাতা সিদ্ধিদাত্রী! আমার স্বভাবের এই প্রখরতা কবে দূর হবে?”

পার্বতী হেসে উত্তর দিলেন, “যখন তোমার সামনে একটি শিলা থেকে জীবন্ত নারী রূপ নেবে, তখন।”


Comments