সূত্র - সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপুর দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' পত্রিকায় সম্পাদকীয় ধারাবাহিকের নম্বর ১৪০০ ও ১৪০১.
সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধ বাপু তাঁর দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' পত্রিকার তুলসীপত্র নামক সম্পাদকীয় স্তম্ভের ১৪০০ সংখ্যক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন,
ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা সকল ব্রহ্মর্ষি এবং ব্রহ্মবাদিনীদের সাথে আদিমাতার শ্রীবিদ্যা রূপকে প্রণাম করলেন। এবং তাঁরা সবাই লোপামুদ্রার নেতৃত্বে আদিমাতা শ্রীবিদ্যার সামনে ধ্যান করতে বসলেন।
তাঁদের সকলের দিকে অন্যান্য সকল উপস্থিতগণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।
সেই সকল ব্রহ্মর্ষি এবং ব্রহ্মবাদিনীদের মুখে ধীরে ধীরে একটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক, শান্ত রসপূর্ণ ও প্রসন্ন ভাব ফুটে উঠতে লাগল। আর এই ভাব বাড়তেই থাকছিল।
তবে শুধু লোপামুদ্রার মুখই সম্পূর্ণরূপে স্থির এবং শান্ত ছিল। তাঁর মুখে এমন প্রসন্ন ভাবও ছিল না আর অপ্রসন্নতাও ছিল না। এটা দেখে সকল উপস্থিতগণ আরও বেশি কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।
![]() |
আদিমাতা 'শ্রীবিদ্যা'। |
ভগবান ত্রিবিক্রম এখন 'ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ' এই মন্ত্র জপ শুরু করলেন এবং ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার মস্তকে তাঁর বরদহস্ত রাখলেন।
তার সঙ্গে সঙ্গে লোপামুদ্রার মুখেও সেইরকমই আনন্দদায়ক, শান্ত রসপূর্ণ ও প্রসন্ন ভাব ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
আর ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার ঠোঁট দুটি একে অপরের থেকে আলাদা হলো এবং তিনি নিজেও 'ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ' এই জপ করা শুরু করলেন।
তার সাথে অন্যান্য সকল ব্রহ্মর্ষি এবং ব্রহ্মবাদিনীগণ নিজেদের চোখ খুললেন।
তবে ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার চোখ এখনো বন্ধই ছিল। তিনি জোরে মন্ত্রোচ্চারণ করলেও তিনি এখনো ধ্যানেই আছেন তা প্রত্যেকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছিল।
লোপামুদ্রার মস্তক থেকে ভগবান ত্রিবিক্রমের বরদহস্ত তাঁর চুল থেকে আলাদা হতেই ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা পদ্মাসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং তিনি তাঁর দুটি হাত জোড় করলেন; কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এখনো সম্পূর্ণরূপে ধ্যানেই ছিলেন।
এই সময় লোপামুদ্রার মুখ কেবল আনন্দ দেখাচ্ছিল। যেন আনন্দের বিভিন্ন রঙ, বিভিন্ন উৎস, বিভিন্ন প্রবাহ, বিভিন্ন সাগর তাঁর একটি মুখে আনন্দের সাথে বসবাস করছিল।
ভগবান ত্রিবিক্রমের কথা সকলের কানে পৌঁছাল, এটি ব্রহ্মানন্দ অবস্থা। এটিই আসল পূর্ণ অবস্থা এবং পূর্ণ গতি।
এমন ব্রহ্মানন্দ শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার সতেরো এবং আঠারো নম্বর কক্ষ (সোপান) পার হওয়ার পরই প্রাপ্ত হয়।
এই অন্যান্য সকল ব্রহ্মর্ষি এবং ব্রহ্মবাদিনীদেরও এই ব্রহ্মানন্দ প্রাপ্ত হয়েছে। তবে প্রবীণ ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার কাছে আরও একটি ভিন্ন জিনিস রয়েছে
- লোপামুদ্রা আদিমাতার ভক্তি প্রচার করার কারণে অর্থাৎ কোটি কোটি গুণকীর্তন করার কারণে এবং তাও আমি গুণকীর্তন করছি এই ভাব একটুও না থাকায় এই লোপামুদ্রা খুব সহজে নিজের ব্রহ্মানন্দও আদিমাতার চরণে এক মুহূর্তে অর্পণ করতে শুরু করলেন।
আর লোপামুদ্রা যে ব্রহ্মানন্দ অর্পণ করলেন, তা আদিমাতা যেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছিলেন সেই মূল স্থানে অর্থাৎ শ্রীদত্তগুরুদের চরণে পৌঁছাল।
আর এইভাবে লোপামুদ্রার ব্রহ্মানন্দের সাথে সচ্চিদানন্দের সংযোগ ঘটল। যার কারণে এই ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা, তাঁর প্রতিটি কাজ করার সময়ও সবসময় ব্রহ্মানন্দেই মগ্ন থাকেন।
শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার আঠারোটি কক্ষ পার হলেই এই সচ্চিদানন্দের প্রাপ্তি ঘটে।
আর এমন প্রাপ্তি শুধু লোপামুদ্রার কাছেই আছে। আর এই জন্যই তিনি শ্রীবিদ্যাসংহিতা, শ্রীশাম্ভবীবিদ্যা, শ্রীশাম্ভবীমুদ্রা, শ্রীশাম্ভবীধ্যান এবং সচ্চিদানন্দ উপাসনার সর্বোচ্চ পথপ্রদর্শক গুরু।
ভগবান ত্রিবিক্রম 'অবধূতচিন্তন'... বলা মাত্রই ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার চোখ খুলে গেল। এবং তাও '...শ্রীগুরুদেবদত্ত' এই শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে।
![]() |
স্বয়ংভগবান ত্রিবিক্রম। |
ভগবান ত্রিবিক্রম লোপামুদ্রাকে কথা বলার অনুমতি দিতেই সেই প্রবীণ ব্রহ্মবাদিনী বলতে লাগলেন, হে প্রিয় আপ্তগণ! শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার সতেরো এবং আঠারো নম্বর কক্ষ্যের (সোপানের) অধিষ্ঠাত্রী হলেন নবমী নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী।
এই সিদ্ধিদাত্রীই নবরাত্রির নবমী তিথির রাত এবং দিনের নায়িকা।
শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার সতেরো নম্বর কক্ষে আসা সাধককে ভগবান ত্রিবিক্রম স্বয়ং শ্রীশাম্ভবীধ্যানম্ শেখান এবং তিনি তার অনুশীলনও করান।
কিছুক্ষণ আগে আমরা সকলে যে ধ্যানে বসে ব্রহ্মানন্দে ভরে গিয়েছিলাম, সেই ধ্যানই হলো শ্রীশাম্ভবীধ্যানম্।
এই সতেরো নম্বর সোপানে ভগবান ত্রিবিক্রম সেই সাধকের হাত নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রীর হাতে দেন।
আর সেই মাতা সিদ্ধিদাত্রী সেই সাধককে নিজের সন্তানের মতো মানুষের ১০০৮ বছর পর্যন্ত নিজের কাছে রাখেন এবং তখনই শ্রীশাম্ভবীধ্যানম্ সম্পূর্ণ রূপ লাভ করে।
আঠারো নম্বর সোপানে অবশ্য এই সিদ্ধিদাত্রী ভগবান ত্রিবিক্রমের সম্মতি নিয়ে সেই সাধকের হাত আবার ভগবান ত্রিবিক্রমেরই হাতে দেন।
ভগবান ত্রিবিক্রম একটুও দেরি না করে, সেই সাধককে নিজের দুটি হাতে একটি শিশুর মতো তুলে নেন।
আর সেই সাধককে আট বছরের শিশু বানিয়ে আদিমাতার মণিদ্বীপনিবাসিনী রূপের দিকে অর্থাৎ সিংহাসনস্থ অষ্টাদশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপের দিকে অর্থাৎ ললিতাঅম্বিকা রূপের দিকে অর্থাৎ মূল শ্রীবিদ্যা রূপের দিকে নিয়ে পৌঁছিয়ে দেন।
মণিদ্বীপে তারপর সেই শিশু শিশুসুলভ খেলা করতে করতে সবসময় থাকে - অর্থাৎ ব্রহ্মর্ষি বা ব্রহ্মবাদিনী হয়েই।
মণিদ্বীপে শিশু হিসেবে থাকাকালীনই, এই সকল সাধক তারপর বসুন্ধরা বা মানুষের বসতি থাকা অন্য কোনো গ্রহে তাঁদের মূল রূপে বাস করেন, কাজও করেন। এবং কিছু সময় তো জন্মও নেন। আর সেখানকার পরিস্থিতি অনুযায়ী মৃত্যুকেও গ্রহণ করেন। কিন্তু এঁদের জন্ম এবং মৃত্যুর কোনো অর্থ নেই। এঁরা সবসময় ব্রহ্মানন্দীই থাকেন।
ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা এতটুকু বলার পর আদিমাতা শ্রীবিদ্যার চরণে বিভিন্ন রঙের সুগন্ধি ফুল অর্পণ করলেন। তার সাথে আদিমাতার সিংহাসনস্থ মণিদ্বীপ-স্বরূপ সেখানে প্রকাশিত হলো।
আর আদিমাতার বাঁদিকে চার এবং ডানদিকে চার এভাবে প্রতিপদা থেকে অষ্টমী পর্যন্তের নবদুর্গারা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আর আদিমাতার মস্তকে সুবর্ণকমলছত্র ধরে নবমী নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তাঁর মুখে এবং আদিমাতার মুখে এক বিন্দুও পার্থক্য ছিল না।
বাপু এরপর ১৪০১ সংখ্যক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন,
নবমী নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী সকলের সামনে এসে কৈলাসের ভূমিও পায়ে স্পর্শ না করে দাঁড়ালেন।
মাতা সিদ্ধিদাত্রীর বর্ণ সদ্য ফোটা গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতো ছিল।
তাঁর চোখ দুটি অত্যন্ত বিশাল এবং তীক্ষ্ণ ছিল। যেন তাঁর দৃষ্টি যে কোনো কিছুর ভেতর দিয়েও যেতে পারত।
তিনি চতুর্ভুজা ছিলেন। তাঁর কপালদেশে তৃতীয় নয়নের পরিবর্তে কুঙ্কুমতিলকই দেখা যাচ্ছিল।
তাঁর চারটি হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম এই অস্ত্রগুলো ছিল।
তাঁর পোশাক লাল রঙের এবং সোনালি পাড়ের ছিল।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাঁর প্রতিটি নড়াচড়া অত্যন্ত সূক্ষ্ম, কোমল এবং ধীর ছিল।
মাতা সিদ্ধিদাত্রীর মুখে একটিই ভাব প্রসন্নভাবে ফুটে উঠছিল আর তা হলো সন্তোষ।
আর সেই সন্তোষ মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে নিজের শক্তি দ্বারা প্রতিটি শ্রদ্ধাবানের কাছে নিজে থেকেই পৌঁছাচ্ছিল।
ভগবান ত্রিবিক্রম ইশারা করতেই ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রীর গলায় সুগন্ধি জুঁই ফুলের মালা অর্পণ করলেন এবং তাঁর চরণে চাঁপা ও গোলাপ ফুল অর্পণ করলেন।
পরের ঘটনা দেখে প্রত্যেকে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল; কারণ সিদ্ধিদাত্রীর চরণে অর্পণ করা প্রতিটি ফুল ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রার গলায় এসে একটি সুন্দর ফুলের মালা তৈরি হলো।
নিজের কাছে থাকা সব ফুল অর্পণ করার পর লোপামুদ্রা আদিমাতা ও সিদ্ধিদাত্রীর অনুমতি নিয়ে সকল উপস্থিতদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন, হে ভাগ্যবান আপ্তগণ! আপনারা সত্যি খুব ভাগ্যবান কারণ আপনাদের সকলকে একেবারে সঠিক ক্রমে নজন নবদুর্গার দর্শনও হলো এবং তাঁদের মাহাত্ম্যও শোনা হলো।
এই বিশ্বে অণিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, মহিমা, ঈশিত্ব ও বশিত্ব, সর্বকামাবসাহিতা, সর্বজ্ঞত্ব—এমন অসংখ্য সিদ্ধি রয়েছে।
তাদের মধ্যে অণিমা, লঘিমা, মহিমা ইত্যাদি আটটি প্রধান সিদ্ধি ধরা হয়।
বসুন্ধরাতেই শুধু নয়, অন্যান্য পৃথিবীতেও অনেকে যে তপস্যা করেন, তা বেশিরভাগই কোনো না কোনো সিদ্ধি প্রাপ্তির জন্যই হয়।
![]() |
শ্রী অনিরুদ্ধগুরুক্ষেত্রের শ্রীচণ্ডিকা প্রতিমার সামনে শ্রীস্বস্তিক্ষেম তপস্যা চলাকালীন হোম করছেন সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু। |
যে যে তপস্বী যে যে চণ্ডিকা কুলের সদস্যকে নিজের আরাধ্যদৈবত মেনে তপস্যা করেন বা সাধনা করেন, তাকে সেই সেই দেবতার কাছ থেকে বরদান মেলে। আর এই বরগুলো যদি সিদ্ধির হয়, তবে এই নবমী নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী সেই সাধককে যে সিদ্ধিগুলো মেলে সেগুলোর উপরও নিজের নজর রাখেন।
কারণ নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রীর প্রভামণ্ডল থেকেই সব ধরনের সিদ্ধি তৈরি হয়। আর সেখান থেকেই এই সব সিদ্ধির আসল কাজ পুরো ব্রহ্মাণ্ডে চলতে থাকে।
সত্যি বলতে, সিদ্ধি পাওয়ার আশা রাখাটা ভুল। কারণ সিদ্ধি প্রাপ্ত হওয়ার ফলে যে ক্ষমতা পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করার বুদ্ধি যদি ন্যায়ী না হয় এবং পবিত্র না হয়, তবে সেই সাধক অসুর হতে বেশি সময় লাগে না।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সত্যিকারের শ্রদ্ধাবানের কোনো সিদ্ধি প্রাপ্ত করার দরকারই নেই।
কারণ যখন কোনো সত্যিকারের শ্রদ্ধাবান দুটি নবরাত্রিতেই আদিমাতা/নবদুর্গাদের শ্রদ্ধাপূর্বক আন্তরিকভাবে নিয়মিত পূজা করেন, আদিমাতার চরিত্র বারবার পাঠ করতে থাকেন এবং তাঁর গুণকীর্তনে মগ্ন হয়ে যান, তখন তাঁর জীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত সিদ্ধির কাজ এই মাতা সিদ্ধিদাত্রী, প্রার্থনা না করলেও, শ্রদ্ধাবানকে পূরণ করতেই থাকেন।
![]() |
অম্বজ্ঞ ইষ্টিকা। |
শুধু তাই নয়, আদিমাতার এই চণ্ডিকা কুলের সকল পুত্র এবং কন্যাদের পূর্ণ ভক্তি যারা করেন, তাদেরকেও এই নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধির কাজ নিশ্চিতভাবে প্রদান করতে থাকেন।
তাঁর মুখে সবসময় যে সন্তোষ ফুটে থাকে তা সকল শ্রদ্ধাবানকে আশ্বাস দিয়ে যায় যে তিনি আপনার শ্রদ্ধাপূর্বক করা প্রতিটি কাজ সন্তোষের সাথে গ্রহণ করেন এবং আপনার সামান্য সেবায়ও তিনি প্রসন্ন হন - তবে যদি আপনার সিদ্ধি চাই, তবে তাঁর মুখের সন্তোষ আপনি দেখতে পারবেন না।
প্রতিটি ব্রহ্মর্ষি ও ব্রহ্মবাদিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধি আছে এবং তাঁদের প্রয়োজন মতো সিদ্ধি তাঁরা যেকোনো সময় পেতে পারেন।
এতটুকু বলার পর প্রবীণ ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা হঠাৎ থেমে গেলেন এবং ভগবান ত্রি বিক্রম কথা বলতে শুরু করলেন, হে আমার সন্তানেরা! এই সকল ব্রহ্মর্ষি এবং ব্রহ্মবাদিনীগণকে শ্রীশাম্ভবীবিদ্যার আঠারো নম্বর সোপানেই (কক্ষে) প্রথমে ১০৮টি সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁদের জন্য সমস্ত সিদ্ধিগুলো উপলব্ধও হয়।
তবে আসল রহস্য এখানেই। যে কেউ এই প্রাপ্ত সমস্ত সিদ্ধি তৎক্ষণাৎ আদিমাতার চরণে অর্পণ করবেন না এবং সেগুলোর থেকে মুক্ত হতে চাইবেন না, তিনি ব্রহ্মর্ষিই হতে পারেন না।
আঠারো নম্বর সোপানে প্রাপ্ত সমস্ত সিদ্ধি যখন আদিমাতার চরণে অর্পণ করা হয়, তখন তাঁদের এই নিষ্কাম ভাব দেখে আদিমাতা সেই সেই ব্রহ্মর্ষি বা ব্রহ্মবাদিনীর সমস্ত সিদ্ধি এই সিদ্ধিদাত্রীর কাছে সমর্পণ করেন। আর এই সিদ্ধিদাত্রী প্রত্যেকের সিদ্ধি তাঁর প্রভামণ্ডলের মধ্যে তাঁদের নিজেদের নামেই সংরক্ষণ করে রাখেন।
আর তখনই আদিমাতা, শ্রীদত্তাত্রেয় ও সিদ্ধিদাত্রী সেই সেই ব্রহ্মর্ষি বা ব্রহ্মবাদিনীকে তাঁদের কাছে যে সিদ্ধি নেই তা কেবল সিদ্ধিদাত্রীকে স্মরণ করে ব্যবহার করার বরদান দেন।
ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা ভগবান ত্রিবিক্রমকে মনে মনে প্রণাম করলেন এবং বললেন, "হে আপ্তগণ! সাংসারিকদের জন্য এই নবমী নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী তাঁদের সর্বপ্রকার অভ্যুদয় অর্থাৎ উন্নতি করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকেন।
অন্যকে অন্যায়ভাবে দুঃখ না দিয়ে, যতটুকু সুখ শ্রদ্ধাবানের প্রয়োজন, ততটুকু সমস্ত এই নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী শ্রদ্ধাবানকে দিতেই থাকেন।
মূলত এই নবদুর্গা সিদ্ধিদাত্রী এবং আদিমাতার সকল বিদ্যার উপর সাম্রাজ্য স্থাপনকারী সিদ্ধেশ্বরী স্বরূপ একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বাঁধা হয়ে থাকেন।
পার্বতী তাঁর জীবনের এই নবম ধাপের পরই অন্নপূর্ণা, সদাপূর্ণা, ভাবপূর্ণা, প্রেমপূর্ণা এবং শক্তিপূর্ণা এই পঞ্চবিধ কাজের মাধ্যমে আদিমাতার ক্ষমা নামক সহজভাব প্রত্যেক শ্রদ্ধাবানের প্রাপ্ত হোক এই জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন।
আর তা সবসময় এমনটাই থাকবে।
Comments
Post a Comment