সদগুরু শ্রীঅনিরুদ্ধের ভাববিশ্ব থেকে - মাতা পার্বতীর নবদুর্গারূপের পরিচয় - পর্ব 2

 

সন্দর্ভ -  সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু তাঁর ‘তুলসীপত্র’ নামক সম্পাদকীয় সিরিজে, ১৩৮২ এবং ১৩৮৩ সংখ্যায় লেখেন: 

‘তুলসীপত্র’ - ১৩৮২ থেকে: সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু তাঁর সম্পাদকীয়, তুলসীপত্র- ১৩৮২ তে লেখেন, 

লোপামুদ্রা অত্যন্ত স্নেহভরে ঋষি গৌতমকে তার কাছে ডেকে নিলেন এবং তার কপালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বললেন, “প্রিয় গৌতম! ব্রহ্মর্ষি কশ্যপ এখনই যেমন বললেন, তুমি ‘সূর্যকিরণ’ বিজ্ঞানের একজন মহান বিজ্ঞানী। কিন্তু আমি কি তোমাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি?”

ঋষি গৌতম তৎক্ষণাৎ বিনীতভাবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। তখন লোপামুদ্রা তাকে প্রশ্ন করলেন, “যেহেতু তুমি সূর্যকিরণ বিজ্ঞানের একজন মহান বিজ্ঞানী, সেইহেতু তুমি সূর্যকিরণের সমস্ত উপাদান ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছো। তাহলে তুমি চন্দ্রকিরণও নিশ্চয়ই অধ্যয়ন করেছো, তাই না?”

ঋষি গৌতম উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, মাতা।”

লোপামুদ্রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরের প্রশ্নটি করলেন, “হে গৌতম! সূর্যেরই কিরণ কেবল চাঁদের দ্বারা প্রতিফলিত হয়; কিন্তু তাদের দাহকতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটি চাঁদের কাজ। তাহলে এর পেছনের কারণতত্ত্ব ও মূল তত্ত্ব তুমি খুঁজে বের করেছো কি?”

ঋষি গৌতম উত্তর দিলেন, “মাতা! আমি এই বিভাগে এখনও একজন শিক্ষার্থীই। 'সূর্যকিরণ থেকে চন্দ্রকিরণ' পর্যন্ত এই শাস্ত্রটি আমার এখনও ভালোভাবে অধ্যয়ন করা হয়নি।”

সেই মুহূর্তেই পার্বতী গৌতমকে বললেন, “হে বৎস গৌতম! তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী এবং সৎ শিক্ষার্থী, অধ্যাপক এবং বিজ্ঞানীও বটে। তোমার জন্য এটি খুঁজে বের করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে ‘চাঁদের দ্বারা প্রতিফলিত হওয়ার সময় সূর্যের কিরণগুলি কীভাবে মৃদু, শীতল এবং আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।’ এই অধ্যয়নটি সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার স্বভাবের উগ্রতা বিলীন হয়ে যাবে এবং তোমার একমাত্র তামসিক গুণ অর্থাৎ ‘অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ’ও চলে যাবে। এবং এটি তোমাকে নিজের জন্যই নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ‘অনুসন্ধান’ই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা মানবকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।” 

এখন লোপামুদ্রা আবার কথা বলতে শুরু করলেন, “হে উপস্থিত শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাবানগণ! শম্ভবী বিদ্যার দ্বিতীয় ধাপে, 'আমি আদিমাতাকে প্রসন্ন করতে চাই এবং সর্বদা প্রসন্ন রাখতে চাই, তেমনই আমি ত্রিবিক্রমের সৎ‍‍শিষ্য ও সুপুত্র হতে চাই এবং সর্বদা তারই সেবা করতে চাই' এই ব্যাকুলতাই একমাত্র সাধন।

ত্রিবিক্রমকে নিজের সদ্গুরু বানানোর জন্য, দুটি জিনিসই আবশ্যক: শ্রেষ্ঠ ‘মণিদ্বীপমন্ত্র’ অর্থাৎ ‘শ্রীগুরুক্ষেত্রম্ মন্ত্র’ উচ্চারণ করা এবং ‘অম্বজ্ঞ হওয়া’।

এই দ্বিতীয় ধাপেই অনেক বছর কষ্ট করতে হয় এবং তখনই শম্ভবী বিদ্যার তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ কক্ষটি আমাদের জন্য খোলে।

শম্ভবী বিদ্যার এই প্রথম দুটি কক্ষের (ধাপের) অধিষ্ঠাত্রী হলেন  শৈলপুত্রী  পার্বতী।.

পার্বতীর এই নয়টি ‘নবদুর্গা’ রূপই ক্রমানুসারে শম্ভবী বিদ্যার আঠারোটি কক্ষের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা এবং এর পেছনেও একটি কারণ-পরম্পরা ও সিদ্ধান্ত রয়েছে।

শম্ভবী বিদ্যা হলো মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি বিবর্তন। এটি বিপ্লব -এর পথে কখনো ভ্রমণ করে না এবং ভক্তমাতা পার্বতীর সম্পূর্ণ চরিত্রই শম্ভবী বিদ্যার এক জীবন্ত উদাহরণ।”

শিব-ঋষি তুম্বুরু এবং দেবর্ষি নারদ অত্যন্ত বিনীতভাবে প্রণাম করে ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রাকে প্রশ্ন করলেন, “হে লোপামুদ্রা! আপনি কি দয়া করে আরও বিস্তারিতভাবে, পার্বতীর চরিত্র এবং এই নবদুর্গার রূপ ও শম্ভবী বিদ্যার আঠারোটি কক্ষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলবেন?”

লোপামুদ্রা প্রসন্ন মুখে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। কারণ এটি না শিখলে শম্ভবী বিদ্যার প্রাথমিক পরিচিতিও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। 

হে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাবানগণ!


১) ‘সতী’ রূপের আত্মদহনের পর এই শিবপ্রিয়া ‘পার্বতী’ রূপে হিমালয়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন এবং তাই ইনি শৈলপুত্রী। এই শৈলপুত্রী অত্যন্ত আদর্শ কন্যা ছিলেন। ‘কন্যা’ হিসেবে ইনি পিতা হিমবান এবং মাতা মেনকাকে যে পরিপূর্ণ আনন্দ দিয়েছিলেন, তা সত্যিই বিশ্বের প্রতিটি সন্তানের জন্য অত্যন্ত আদর্শ। এবং শম্ভবী বিদ্যার উপাসককে তো দ্বিতীয় ধাপে তার পিতা ত্রিবিক্রমকে আনন্দিতই করতে হয়। আর এই কারণেই শম্ভবী বিদ্যার প্রথম দুটি কক্ষের অধিষ্ঠাত্রী হলেন শৈলপুত্রী পার্বতী। অর্থাৎ, নবরাত্রির প্রতিপদের - প্রথম দিন-রাত্রির নায়িকা।

২) এই একই আদর্শ কন্যা শৈলপুত্রী পরবর্তীতে সর্বগুণসম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠ স্বামী পাওয়ার জন্য অর্থাৎ পরমশিব যেন তাকে গ্রহণ করেন এই উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ মানবিক প্রচেষ্টা দিয়েই তপস্যায় বসলেন। তার এই রূপকেই ‘নবদুর্গা ব্রহ্মচারিণী’ বলা হয় এবং ইনি শম্ভবী বিদ্যার তৃতীয় ও চতুর্থ কক্ষের অধিষ্ঠাত্রী। অর্থাৎ, নবরাত্রির দ্বিতীয় তিথির দিন-রাত্রির নায়িকা। 

কারণ শম্ভবী বিদ্যার তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে (১) একাকীত্ব (২) আরাধ্যা দেবতার চিন্তা (৩) তারই চরণে সমর্পণের পূর্ণ অনুভূতি (৪) এবং তার জন্য যেকোনো ত্যাগ করার প্রস্তুতি - এই চারটি সাধনারই প্রয়োজন হয় এবং এই চারটি গুণই ব্রহ্মচারিণীর চিন্তা ও পূজা দ্বারা মানব লাভ করে।”

শিব-ঋষি তুম্বুরু শ্রদ্ধাভরে প্রশ্ন করলেন, “কিন্তু কোন আরাধ্যা দেবতাকে বেছে নিতে হবে?”

এখন ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “শ্রী চণ্ডিকা কুলের যেকোনো একজনকে নিজের আরাধ্যা দেবতা হিসেবে বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আদিমাতা প্রত্যেক শ্রদ্ধাবানকে দিয়েছেন। তাই, যার যে দেবতা পছন্দ হয়, ভালো লাগে, কাছের মনে হয় তাকে বেছে নেওয়ার প্রত্যেক শ্রদ্ধাবানেরই পূর্ণ অধিকার আছে। 'অমুকই দেবতাকে বেছে নিতে হবে' এমন কোনো নিয়ম নেই।”

দেবর্ষি নারদ তার স্বভাবসুলভ কৌতুক করে ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করলেন, “শ্রদ্ধাবানের সম্পূর্ণ জীবনযজ্ঞের পথপ্রদর্শক এবং স্বয়ং ত্রিবিক্রম দ্বারা ‘নিত্যগুরু’ হিসেবে গৃহীত ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য শম্ভবী বিদ্যার সাধনা করার সময় নিজের আরাধ্যা দেবতা হিসেবে কাকে বেছে নিয়েছিলেন?”

ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য নারদের খেলা বুঝে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে, কিন্তু তবুও অস্পষ্টই উত্তর দিলেন, “আমার আরাধ্যা দেবতার চরিত্র তুমি এখনও দেখোনি এবং তা তুমি শীঘ্রই জানতে পারবে। কারণ তুমি এবং আমি দুজনেই জানি যে ভণ্ডাসুর জন্ম নিয়েছে।”

সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু তাঁর সম্পাদকীয়, তুলসীপত্র- ১৩৮৩ তে লেখেন, 

ভক্তমাতা পার্বতী এবং ঋষি গৌতমের মধ্যে এবং তারপর দেবর্ষি নারদ এবং ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যের মধ্যে কথোপকথন সেখানে উপস্থিত ঋষিকুমার ও শিবগণ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলেন; কিন্তু ততটা স্পষ্ট বুঝতে পারেননি। ‘ভণ্ডাসুর জন্ম নিয়েছে’ ব্রহ্মর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যের এই উক্তির কারণে তো সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল।

তাদের অস্থিরতা দেখে ভক্তমাতা পার্বতী নিজেই আবার কথা বলতে শুরু করলেন, “হে শ্রদ্ধাবানগণ! ভণ্ডাসুর সম্পর্কে চিন্তা ও কৌতূহল মন থেকে সরিয়ে ফেলুন। কারণ ভণ্ডাসুর জন্ম নিলেও, সে এখনও কোনো কর্মকাণ্ড শুরু করেনি এবং আমি শুধু এতটুকুই বলছি যে ভণ্ডাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ হতেই হবে। কিন্তু তা শুরু হওয়ার আগে আপনাদের সবার জন্য শম্ভবী বিদ্যা বোঝা অত্যন্ত জরুরি এবং আমাদের কাছে প্রচুর সময়ও আছে।

‘শিব-ত্রিপুরাসুর যুদ্ধ’ যেমন শম্ভবী বিদ্যার কথাস্বরূপ, তেমনই ‘ভণ্ডাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ ও তার বধ’ হলো শম্ভবী বিদ্যার মানব জীবনের প্রত্যক্ষ প্রভাব ও কাজের কথাস্বরূপ।”.

ভক্তমাতা পার্বতীর এই উক্তির সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার সবার মন আবার শান্ত হয়ে গেল এবং তারা আবার লোপামুদ্রার দিকে ফিরে, তিনি এখন কী বলেন তার দিকে মনোযোগ দিয়ে বসলেন।

ব্রহ্মবাদিনী লোপামুদ্রা ঋষি গৌতমের দিকে তাকিয়ে স্মিতমুখে বললেন, “প্রিয় বৎস গৌতম! তুমি ‘সূর্যকিরণ থেকে চন্দ্রকিরণ’ পর্যন্ত এই যাত্রার যে অধ্যয়ন করবে, তার মূল উৎস হলো তৃতীয় নবদুর্গা ‘চন্দ্রঘণ্টা’

এই ‘চন্দ্রঘণ্টা পার্বতী’ নবরাত্রির তৃতীয় দিন-রাত্রির নায়িকা। ইনি দশ হাত বিশিষ্ট এবং মাথার উপরে অর্ধচন্দ্রকেই অর্থাৎ শুদ্ধ অষ্টমীর চাঁদকেই, চুলের সাজে সূক্ষ্ম ঘণ্টা হিসেবে ব্যবহার করেন। তার এই চন্দ্ররূপী ঘণ্টা থেকে যে আলো বের হয় তা শব্দস্বরূপও হয় এবং এই ঘণ্টার শব্দ আলোকতরঙ্গ দ্বারা তৈরি হয়।


এমন এই তৃতীয় নবদুর্গা চন্দ্রঘণ্টা, শব্দ এবং আলো এই দুটি মূল অভিব্যক্তির একাত্মতা ঘটান এবং তা দেখান। 

আলোক রশ্মির গতি শব্দ তরঙ্গের গতির চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু এই নবদুর্গার এই চন্দ্ররূপী ঘণ্টাই একমাত্র এমন সাধন যা আলোকতরঙ্গ এবং শব্দতরঙ্গের একে অপরের মধ্যে রূপান্তর (Transformation) সহজে ঘটিয়ে দেয়।

এবং এই জিনিসটি সমস্ত শ্রদ্ধাবানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থায়ীভাবে মনে রাখার মতো। কারণ যে পরিমাণে মানবের চণ্ডিকা কুলের উপর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকে, সেই পরিমাণেই এই চন্দ্রঘণ্টা নবদুর্গা তার জীবনে সক্রিয় হন। এবং তখন তার কারণেই সেই শ্রদ্ধাবানের প্রার্থনার শব্দ আলোকতরঙ্গের গতিতে ভ্রমণ করে এবং তার প্রার্থনার ফলও, অর্থাৎ চণ্ডিকা কুলের বরদানও, সেই একই দ্রুতগতিতে তার কাছে এসে পৌঁছায়।

 তবে ‘‘আমার তোমার উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে’— এ কথা শুধু মুখে বললেই হয় না, তা আপনার কাজেও প্রকাশিত হতে হবে। এবং শম্ভবী বিদ্যার পঞ্চম ও ষষ্ঠ কক্ষ অর্থাৎ এই ধাপটি হলো শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসকে নিজের কর্ম এবং আদেশ পালনের মাধ্যমে প্রমাণ করার ধাপ।

এই কারণে শম্ভবী বিদ্যার ৫ম এবং ৬ষ্ঠ ধাপই হলো শ্রদ্ধাচরণ এবং বিশ্বাসাচরণ এবং এই দুটি কক্ষের স্বামিনী হলেন ‘নবদুর্গা চন্দ্রঘণ্টা’। 

এই দুটি ধাপ শ্রদ্ধাবানকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি দান করে ধৈর্য (সবুরি)। এই ধৈর্য ছাড়া মানুষের জীবন শূন্য থাকে। ধৈর্যের অভাবের কারণেই মানুষ ভুল পথে চালিত হয়, নিজের অহংকার বৃদ্ধি করতে থাকে, মোহে আবদ্ধ থাকে এবং সঠিক দিককে ভুল দিক মনে করে বসে।

যে শ্রদ্ধাবান নিজের আরাধ্যা দেবতার চিন্তা, ভজন, পূজা, নামস্মরণ ও গুণকীর্তন করতে করতে নিজের বিশ্বাসকে কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকেন, তাকে এই নবদুর্গা চন্দ্রঘণ্টার কাছ থেকে সময়ে সময়ে ধৈর্যের সরবরাহ হতে থাকে এবং তা-ও চন্দ্রকিরণের মতো - মৃদু ও শান্তভাবে।

পার্বতীর এই রূপই তার শিবের সঙ্গে বিবাহের সময় প্রকাশ পেয়েছিল এবং সেই কারণেই ‘চন্দ্রঘণ্টা’ই শিবপত্নী পার্বতীর নিত্যস্বরূপ। এই ‘চন্দ্রঘণ্টা’ রূপে এই পার্বতী পরমশিবের নিত্য সহধর্মিণী হলেন এবং শিব তার হাত নিজের হাতে নিতেই, তিনি একটি মৃদু, শান্ত, সুন্দর ও সাত্ত্বিক হাসি হাসলেন।

এই হাসিকেই ‘ঈষৎ‍‍ হাস্য’ বলা হয় এবং এই হাসি থেকেই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে নতুন নতুন তারার জন্ম হতে থাকে এবং সেই প্রতিটি তারা প্রথমে ডিম্বাকৃতি হয়। এবং সেই কারণেই চতুর্থ নবদুর্গার নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’ কারণ প্রতিটি বিশ্ব প্রথমে ‘কুষ্মাণ্ড’ রূপেই থাকে। 

শম্ভবী বিদ্যার ৭ম এবং ৮ম কক্ষ অর্থাৎ এই ধাপের অধিষ্ঠাত্রী হলেন এই ‘নবদুর্গা কুষ্মাণ্ডা’। কারণ শম্ভবী বিদ্যার ৭ম ও ৮ম ধাপে শ্রদ্ধাবানকে কর্মতপস্যা করতে হয় - অর্থাৎ নতুন আবিষ্কার করে মানব স্তরে নতুন সৃষ্টি করতে হয়। এবং নবদুর্গা কুষ্মাণ্ডার শক্তি সরবরাহ ছাড়া কোনো নতুন সৃষ্টিই সম্ভব নয়।

নবরাত্রির চতুর্থ দিন-রাত্রির এই ‘কুষ্মাণ্ডা নবদুর্গা’ নায়িকা এবং এই কারণেই যদি মানব নবরাত্রি-চতুর্থীতে কোনো নতুন শুভ কাজ শুরু করে, তবে তার কাজটি সহজ হয়ে যায়। 

জীবনে কিছু শ্রেষ্ঠ ও উৎকৃষ্ট করে দেখানোর  ইচ্ছা যে শ্রদ্ধাবানের থাকে,  তাকে নবরাত্রির চতুর্থীর রাতে অবশ্যই জেগে থেকে আদিমাতার গ্রন্থগুলি পাঠ করতে হবে এবং দিনে তার পূজা করতে হবে।”

Comments