মোদ-ক

সদগুরু  অনিরুদ্ধ বাপুর  দৃষ্টিকোণ থেকে - গণেশ ভক্তি - ভাগ - 3 - মোদ-ক
সূত্র - সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুদ্বারা রচিত দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' পত্রিকার সম্পাদকীয় (০৬-০৯-২০০৬)

শ্রীগণেশের কথা মনে পড়লেই প্রত্যেক ভক্ত বা এমনকি নাস্তিকেরও প্রথমেই যে জিনিসটার কথা মনে পড়ে, তা হলো মোদক। আজকাল মাওয়ার মোদক পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মাওয়ার মোদক অনেকটা দুধের তৃষ্ণা ঘোলে মেটানোর মতো। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমি সবচেয়ে ভালোবেসে যে মোদক খেয়েছি, তা হলো আমাদের চিরাচরিত মোদক, যেখানে চালের গুঁড়ো মাখনে মেখে তৈরি করা হয় এবং ভেতরের পুরটা তাজা ও সুস্বাদু নারকেল কোরা দিয়ে বাড়িতে তৈরি করা ঘিয়ে ভাজা হয়। তার ওপর, মোদক খাওয়ার সময় সেটা ভেঙে আরও এক চামচ ঘি ঢেলে নেওয়া। সব বাচ্চাদের এই 'ঘিয়ে জবজবে' মোদকটা ভীষণ পছন্দের। এই চিরাচরিত মোদক হলো আহারের মধ্যে থাকা স্নিগ্ধ, সৌম্য (শান্ত) ও গুরু (গম্ভীর) গুণের চরম প্রকাশ। আর ঠিক এই কারণেই মূলাধার চক্রের নিয়ন্ত্রণকারী, অর্থাৎ অত্যন্ত উষ্ণ ও লঘু স্থানের অধিপতি শ্রীমহাগণপতির জন্য এটিই সর্বোত্তম নৈবেদ্য।

আজকের পরিস্থিতিতে হয়তো সবার পক্ষে এমন মোদক তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের উচিত এমন চিরাচরিত মোদক বানিয়ে অত্যন্ত ভালোবেসে শ্রীমহাগণপতিকে অর্পণ করা। দূর্বা ও শমী পত্রের বাহ্যিক পূজা এবং চিরাচরিত মোদকের নৈবেদ্য সত্যিই উগ্র, শুষ্ক ও লঘু গুণগুলিকে নষ্ট করে স্নিগ্ধতা, সৌম্যভাব (শান্তভাব) ও গুরুত্ত্ব (স্থিরতা) স্থাপন করে। এর ফলে, সেই মঙ্গলমূর্তি বরদাবিনায়ক বিঘ্ন নাশ করার জন্য প্রত্যেকের প্রাণময় দেহে ও মনোময় দেহে আবির্ভূত হন।
 
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
 
মোদক বললেই আমার একটা খুব পুরোনো গল্প মনে পড়ে যায়। এক সম্রাট ছিলেন। তিনি নিজে অত্যন্ত বিলাসী স্বভাবের ছিলেন এবং তিনি কোনোরূপ অধ্যয়ন করেননি। তাই তাঁর বাবা তাঁকে সিংহাসনে বসানোর সময়, সেই বিদ্যাহীন রাজপুত্রের বিয়ে একজন অত্যন্ত বিদূষী ও সুশিক্ষিত রাজকন্যার সঙ্গে দিয়েছিলেন। সেই মূর্খ রাজা ও তাঁর বিদূষী, পতিব্রতা রাণী পুরো রাজপরিবার নিয়ে এক সরোবরে জলকেলির জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে সরোবরে জলকেলি করার সময় রাজা রাণীর গায়ে হাত দিয়ে জল ছিটোতে লাগলেন। বিয়ের আগে পর্যন্ত সংস্কৃতই যাঁর পড়ার ভাষা ও বলার ভাষা ছিল, সেই রাণী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, "মোদকৈঃ সিঞ্চ"। তৎক্ষণাৎ রাজা এক সেবককে কাছে ডেকে তার কানে কিছু বললেন। কিছুক্ষণ পরেই সেবক মোদকে ভরা পাঁচ-ছয়টা পাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হলো এবং রাজা একের পর এক মোদক নিশানা করে রাণীর দিকে ছুঁড়তে লাগলেন। এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, রাণী কিছুক্ষণ পরেই নিজেকে সামলে নিলেন এবং অন্যান্য রাজনারী ও অমাত্যদের মুখের কুটিল হাসি দেখে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হলেন; কারণ রাণী বলতে চেয়েছিলেন, "মা উদকৈঃ সিঞ্চ" অর্থাৎ 'আমায় জল দিয়ে ভিজিয়ে দিও না'। কিন্তু শুধু বলতে পারার মতো সংস্কৃত জানা সেই মূর্খ রাজার সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম জানা না থাকায়, তিনি 'মোদকৈঃ' কথাটার সন্ধিবিচ্ছেদ না করেই ভুল অর্থ বুঝেছিলেন। এরপর গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়, কিন্তু আমার তো মনে হয়, রাণীর গায়ে মোদক ছুঁড়ে মারা সেই বোকা রাজাটাই আজকাল নানা রূপে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
 
মোদক নৈবেদ্য সমর্পয়ামি। (আমি মোদকের নৈবেদ্য ভক্তিসহকারে অর্পণ করছি।)
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত গণেশোৎসবে অপরিমেয় প্রেম ও ভক্তিসহকারে গণপতি বাপ্পাকে মোদকের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয়।

গণপতি মোদক ও দূর্বা ভালোবাসেন বলে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই জিনিসগুলি অর্পণ করাটাই নিয়ম। তেমনই, সেই পরমাত্মার রূপও অনেক, তাই বিভিন্ন ধরনের মূর্তি বানানোও অত্যন্ত সঠিক। কিন্তু সেই গণপতিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য জায়গায় জায়গায় লাইন দেওয়াটা তো সেই রাজারই পুনরাবৃত্তি। আমার একটা জিনিস মাথায় ঢোকে না যে, গণপতিকে যদি সত্যিই মোদক এতই প্রিয় হয়, তাহলে তিনি জায়গায় জায়গায় শুধু দুধই কেন পান করেন? মোদক কেন খান না? আর সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রশ্নটা আমাদের কারোর মনেও আসে না। সেই মঙ্গলমূর্তি পরমাত্মা ভক্তের ভালোবেসে দেওয়া সামান্য বাসি রুটির টুকরোও অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করেন, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। মূর্তির সামনে রাখা নৈবেদ্যের থালা থেকে যদি এক কণাও কম না হয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। গীতায় তো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে সমস্ত ভক্তদের এই আশ্বাস দিয়েছেন। আসল কথা হলো, পরমাত্মার এই সব করে নিজের মাহাত্ম্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তেমনই মানুষের মনে ভক্তি বাড়ানোর জন্যও তাঁর এই ধরনের পরিকল্পনার কোনো দরকার নেই। ভক্ত ও অভক্ত প্রত্যেকের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব সম্পর্কে যিনি অবগত এবং যাঁর হাতেই প্রত্যেকের কর্মফল নির্ধারিত, সেই সত্যিকারের পরমাত্মার এই সব অদ্ভুত জিনিসের কখনো প্রয়োজন হয় না।

সম্পাদকীয় শেষ করে সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখছেন -

'বন্ধুরা, সেই পরমাত্মা যা চান, তা হলো তোমাদের অচল শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিয়ে করা ভগবানের ও ভগবানের অসহায় সন্তানদের সেবা। এটাই আসল নৈবেদ্য, না, এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য। এই নৈবেদ্য পরমাত্মা পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং তার সহস্রগুণ ফল প্রসাদ হিসেবে ভক্তকে ফিরিয়ে দেন। মোদক নৈবেদ্য হিসেবে অবশ্যই অর্পণ করুন এবং নিজেও আনন্দের সাথে খান, কিন্তু 'মোদ' মানে যে 'আনন্দ' তা ভুলবেন না। পরমাত্মা ও অন্যদের আনন্দ হয় এমন আচরণ করাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মোদক।'

मराठी >> हिंदी >> English >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>>
মঙ্গলমূর্তি Mangalmurti

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে গণেশ ভক্তি

ভাগ - 1

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!Mangalmurti morya

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!

ভাগ - 2

মোদ-ক Modak

মোদ-ক

ভাগ - 3

বৈদিক গণপতি Vaidik Ganapati

বৈদিক গণপতি

ভাগ - 4

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান Shree Mahaganapati -Devatavidnyan

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান

ভাগ - 5

Comments