Friday, 1 August 2025

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান

 
শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান - সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষর সম্পাদকীয় (১৫-১২-২০০৬)
সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষর সম্পাদকীয় (১৫-১২-২০০৬)

"পর্বত ধারণকারী পার্বতী মাতা পৃথিবীর তরল রূপ, অর্থাৎ চৈতন্যের প্রকাশ ঘটাতে সহায়ক যে দ্রব্যশক্তি (দ্রব্য মানে ভৌত পদার্থ)। এই দ্রব্যশক্তির সাহায্য ছাড়া চৈতন্যের প্রকাশ সম্ভব নয়, আর চৈতন্য ছাড়া দ্রব্যশক্তির অস্তিত্বই নেই। এর অর্থ, দ্রব্যশক্তি সেই মূল চৈতন্য থেকেই উৎপন্ন হয় এবং স্থূলতার দিকে যাত্রা করে। আর তাই, এই শক্তির তরল রূপটিই জগৎমাতা পার্বতী, আর এর পূর্ণ স্থূল রূপটি হলো পৃথিবী।

এই পার্বতীর পুত্র গণপতি, তাই তাঁর তরল রূপে তিনি সমগ্র বিশ্বজগতের ঘনপ্রাণ, সূক্ষ্ম রূপে তিনি নাদ, এবং স্থূল রূপে তিনি পরমাত্মা মহাগণপতি।

গোটা বিশ্বই আসলে প্রণবের (ওঁ) নাদ থেকে প্রকাশ পেয়েছে। প্রণবের নাদ ধ্বনিত হতে শুরু করল এবং নির্গুণ নিরাকার ব্রহ্ম থেকে সগুণ সাকার বিশ্বরূপের উৎপত্তি হতে লাগল। এই 'ওঁকার'-এর, অর্থাৎ মূল ধ্বনির, বর্তমানে বিশ্বে উৎপন্ন প্রতিটি ধ্বনির সাথে যে সম্পর্ক, সেটাই শ্রীমহাগণপতি। মানবজাতি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং বিশেষ ধ্বনিযুক্ত যোগাযোগ শক্তি - অর্থাৎ ভাষার - সাহায্যে চুরাশি লক্ষ যোনির মধ্যে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বিকশিত করেছে। প্রতিটি মানব বিকাশের সূচনাতে এই যোগাযোগ দক্ষতা, অর্থাৎ ভাষাবিজ্ঞান রয়েছে। এবং এই ভাষাবিজ্ঞানের সমস্ত উৎস এই মহাগণপতির গুণাবলী থেকেই প্রকাশ, সিদ্ধ এবং অর্জন করা যেতে পারে।

মানবতার বিকাশের পথে তার বুদ্ধি ও মন নিজেদের এই ভাষাবিদ্যা ও ধ্বনিশাস্ত্রের অপরিসীম গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করে, আর সেখান থেকেই ঋষিদের অর্থপূর্ণ চিন্তাভাবনা শুরু হয়। নব নব উন্মেষশালি প্রজ্ঞা সম্পন্ন এই ঋষিরা তাদের পর্যবেক্ষণ শক্তির সাহায্যে করা চিন্তাভাবনার মাধ্যমে ধ্বনির স্থূল, সূক্ষ্ম ও তরল অস্তিত্বের উপলব্ধি লাভ করতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা 'ওঁকার' পর্যন্ত পৌঁছে যান। 'ওঁকার' দর্শন হওয়ার সাথে সাথেই ঋষিরা পরমেশ্বরের সৎ-চিৎ-আনন্দ (সত্তা-চৈতন্য-আনন্দ) স্বরূপটি উপলব্ধি করেন এবং তখনই অধ্যাত্মশাস্ত্র বিকশিত হতে শুরু করে। এই আধ্যাত্মিক যাত্রাপথেই মূল চৈতন্য এবং দ্রব্যশক্তির মানবজাতির জন্য অপরিহার্য সম্পর্ক উন্মোচিত হয়। মানবজাতির প্রাপ্ত শরীর, মন ও বুদ্ধি—এই তিনটি জীবনস্তম্ভ দ্রব্যশক্তির যথাযথ ব্যবহার ছাড়া যথাযথ বিকাশ সাধন করতে পারবে না—এ বিষয়ে ঋষিরা নিশ্চিত হলেন। একই সাথে তাঁরা এ বিষয়েও নিশ্চিত হলেন যে, মূল চৈতন্যের অধিষ্ঠান ছাড়া দ্রব্যশক্তির যথাযথ ব্যবহার সম্ভব নয়। আর তাই প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে ভৌত জীবন সম্পর্কিত শাস্ত্র এবং অধ্যাত্ম সম্পর্কিত শাস্ত্র কখনও একে অপরের থেকে ভিন্ন থাকেনি।

এই প্রতিভাবান ঋষিরা পুরোপুরি বুঝেছিলেন যে আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি ছাড়া ভৌত জ্ঞানকে গঠনমূলক ও সৃজনশীল উপায়ে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আধ্যাত্মিকতার সমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র ভৌত বিজ্ঞানের অগ্রগতি অনেক ধ্বংসাত্মক, বিনাশকারী এবং অপবিত্র শক্তি ও কার্যকলাপ তৈরি করতে পারে। একই সাথে, ঋষিরা এটিও পুরোপুরি উপলব্ধি করেছিলেন যে, যদি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা, মনন এবং অধ্যয়নের কারণে ভৌত বিদ্যা দুর্বল ও অনুন্নত থাকে, তবে দেহধারী মানুষের শরীর, মন এবং বুদ্ধির সঠিক বিকাশ অসম্ভব।

এই দুটি নীতির ভারসাম্যই মানবজীবনের বিকাশ ও সুখের মূলমন্ত্র। এই সিদ্ধান্ত স্থির হয়, এবং এই সূত্রটিকেই 'গণেশবিদ্যা' বলে সম্বোধন করা হয়। আর এই 'ভারসাম্য'-কেই শিব-পার্বতীর পুত্র, অর্থাৎ গণপতি, এই নাম দেওয়া হয়।

মাঘী গণেশ উৎসবে অধিষ্ঠিত শ্রীব্রহ্মণস্পতি।
মাঘী গণেশ উৎসবে অধিষ্ঠিত শ্রীব্রহ্মণস্পতি।

সগুণ সাকার বিশ্বজগতের প্রতিটি গুণের ভারসাম্য রক্ষা করা শক্তিই মহাগণপতি। এবং তাই তিনি গুণেশও বটে, এবং বিভিন্ন গুণসমূহের অধিপতি হিসাবে গণেশ।

আধ্যাত্মিক শাস্ত্র ও ভৌতশাস্ত্র অর্থাৎ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মধ্যে যে মূল ভারসাম্য সেটাই মহাগণপতি, এইটা জানার পর এই মহাগণপতির বিভিন্ন সূক্ষ্ম প্রকাশের খোঁজ শুরু হল। এই খোঁজের প্রক্রিয়াতেই প্রাণময় দেহের মূলাধার চক্রের উপর গণপতিই প্রভুত্ব বিস্তার করেন, এইটা বোঝা গেল এবং গণপতি ভারতীয় শাস্ত্রে মূলাধার চক্রের অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেন। ভাষাবিজ্ঞান ও যোগাযোগ শাস্ত্রের অধ্যয়ন করার সময় গণপতির আরও একটি সূক্ষ্ম রূপ চেতনার রাজ্যে আসতে শুরু করল, আর তা হল 'বাক্' অর্থাৎ বাণী এবং বুদ্ধির পরিচালনা। তাই শ্রীগণপতি, সমস্ত বিদ্যার আশ্রয়স্থল এবং বুদ্ধি দাতা হিসাবে সমাজ মনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেন।

সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধের বাড়িতে শ্রী গণেশের আগমন হয়েছে।
সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধের বাড়িতে শ্রী গণেশের আগমন হয়েছে।

প্রতিদিনের জীবনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য বিঘ্ন, বাধা ও সংকটের সম্মুখীন হওয়া মানব মনের 'ধৈর্য', অর্থাৎ সবুরও এই 'ভারসাম্যের'ই একটি সূক্ষ্ম রূপ। আর এই রূপই মানুষকে সংকট থেকে পথ বের করতে শেখায়—এই জ্ঞান ঋষিরা লাভ করেন, এবং শ্রীমহাগণপতির 'বিঘ্নহর্তা' (বাধা অপসারণকারী) রূপ চেতনার রাজ্যে প্রবেশ করে। রামদাস স্বামী অত্যন্ত সরল ও সহজ ভাষায় এর বর্ণনা করেছেন: সুখকর্তা, দুঃখহর্তা এবং বিঘ্নের কোনো চিহ্নও না রাখা।

শ্রীমহাগণপতির এই লীলা-স্বভাব জানার পর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর শক্তিকে ব্যবহার করার জন্য একটি গবেষণামূলক সেতু নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ঋষিদের বিজয়ী প্রজ্ঞায় উৎপন্ন হয়। আর সেখান থেকেই এই মহাগণপতির মন্ত্র এবং অথর্বশীর্ষের সৃষ্টি হয়।

ধ্বনিবিজ্ঞানের 'গং' এই বীজাক্ষরটি ঘন (স্থূল) ও তরল-এর মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে, এটি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করে 'গং' গণেশ বীজ মন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং 'গং' থেকেই গণপতি নামটি আসে। তার আগে এই রূপটিকেই 'ব্রহ্মণস্পতি' নামে, একটি সর্বব্যাপী নামে, সম্বোধন করা হত।

 

মূলাধার চক্রের অধিপতি একদন্ত গণপতি, এই বিষয়ে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু ব্যাখ্যা করছেন।

'ব্রহ্মণস্পতি' থেকে 'গণপতি' পর্যন্ত এই যাত্রা কোনো দেবতার যাত্রা নয়, বরং মানব চেতনার যাত্রা। আর তাই, এরা আলাদা না একই, এই বিতর্কই তৈরি হতে পারে না। নাম ও নামান্তর মানব প্রজ্ঞার বিকাশের সেই অবস্থার সহজ ফলশ্রুতি, কিন্তু সেই নামী (নামের মূল) কিন্তু একজনই থাকেন।"

সম্পাদকীয়র শেষে, সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখছেন:

"বন্ধুরা, 'ভারসাম্য' এবং 'সমন্বয়' এই গুণগুলি ছাড়া মানুষের অস্তিত্বই শুধু নয়, সমগ্র বিশ্বের অস্তিত্বও টিকতে পারবে না। মানব জীবনে এই ভারসাম্য বজায় রাখা মানেই বিঘ্ননাশ। এই বিঘ্ননাশের শক্তি, মানব বিশ্বজগতের মূল 'ভারসাম্য' শক্তি থেকেই লাভ করতে পারে, আর তাই গণপতি সর্বদা সমস্ত শুভ কাজের অগ্রভাগে থাকবেন।"
মাঘী গণেশ উৎসবে অষ্টবিনায়কের সঙ্গে অধিষ্ঠিত শ্রীব্রহ্মণস্পতিকে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু পূজা ও উপচার অর্পণ করছেন।
মাঘী গণেশ উৎসবে অষ্টবিনায়কের সঙ্গে অধিষ্ঠিত শ্রীব্রহ্মণস্পতিকে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু পূজা ও উপচার অর্পণ করছেন।

 

मराठी >> हिंदी >> English >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>>
মঙ্গলমূর্তি Mangalmurti

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে গণেশ ভক্তি

ভাগ - 1

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!Mangalmurti morya

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!

ভাগ - 2

মোদ-ক Modak

মোদ-ক

ভাগ - 3

বৈদিক গণপতি Vaidik Ganapati

বৈদিক গণপতি

ভাগ - 4

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান Shree Mahaganapati -Devatavidnyan

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান

ভাগ - 5

No comments:

Post a Comment