Tuesday, 29 July 2025

বৈদিক গণপতি

 
বৈদিক গণপতি - সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষতে প্রকাশিত সম্পাদকীয় (১৫-১২-২০০৬)
বৈদিক গণপতি - সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষতে প্রকাশিত সম্পাদকীয় (১৫-১২-২০০৬)

'ঋগ্বেদে বর্ণিত ব্ৰহ্মণস্পতি-সূক্ত এবং অথর্ববেদে বর্ণিত গণপতি-অথর্বশীর্ষ নামে পরিচিত একটি উপনিষদ, এই দুটি শক্তিশালী রচনা থেকে শ্রী গণেশের বৈদিক অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়।

ঋগ্বেদে বর্ণিত এই মূল মন্ত্রটি হলো -

ওঁ গাণাং ত্বা গণপতিং হবামহে কবিং কবীনামুপমশ্রবস্তমম্‌।

জ্যেষ্ঠরাজং ব্ৰহ্মণাং ব্ৰহ্মণস্পত আ নঃ শৃন্বন্নূতিভিঃ সীদ সাদনম্‌॥

ঋগ্বেদ ২/২৩/১

ভাবার্থ - সম্প্রদায়ের প্রভু হওয়ার কারণে আপনি গণপতি, সমস্ত জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ, সমস্ত কীর্তিমানদের মধ্যে আপনিই সর্বোচ্চ স্থানের অধিকারী এবং আপনিই সমস্ত ক্ষমতাশালীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাশালী, আমরা আপনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনি আপনার সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হন এবং এই আসনে (মূলাধার চক্রে) বিরাজমান হন। (মূলাধার চক্রের আসনে কেবল আপনারই অধিকার চালিত হয়)।

শ্রী ব্রহ্মণস্পতি পূজার সময় সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু।
শ্রী ব্রহ্মণস্পতি পূজার সময় সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু।

ব্রহ্মণস্পতি এই বৈদিক দেবতারই একটি নাম গণপতি, অর্থাৎ গণপতিরই একটি নাম ব্রহ্মণস্পতি। বৈদিক যুগে প্রতিটি শুভ কাজের সূচনা ব্রহ্মণস্পতিকে আহ্বান করে করা হতো এবং আজও সেই মন্ত্রেই গণপতিকে আহ্বান করে পবিত্র কাজের সূচনা করা হয়। ঋগ্বেদে বর্ণিত ব্রহ্মণস্পতি হলেন জ্ঞানদাতা এবং শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, যেমন গণপতিও জ্ঞানদাতা এবং বুদ্ধিদাতা দেবতা। ব্রহ্মণস্পতির হাতে থাকা সোনার পরশু আজও গণপতির হাতে আছে। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে 'সমন্বয়' এই প্রধান তত্ত্ব থাকার কারণে অনেক দেবতার আধ্যাত্মিক স্তরে একত্ব হতে পেরেছে এবং বেদেই বর্ণিত সবকিছুই 'ব্রহ্ম', এই তত্ত্বের কারণে এবং 'একং সদ্‌ বিপ্ৰা বহুধা বদন্তি।' (সেই মূল অস্তিত্ব (পরমেশ্বর) একটাই, জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাকে বিভিন্ন নামে জানেন অথবা আহ্বান করেন।) এই ধারণার কারণে অনেক মূর্তি এবং অনেক রূপ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সংস্কৃতিতে ব্যবহারিক স্তরেও বিভিন্ন পন্থের উপাস্য দেবতাদের একত্ব প্রমাণ করতে কখনও অসুবিধা হয়নি।

ভারতীয় সংস্কৃতির জনমানসে পরমাত্মার বিভিন্ন রূপের পেছনে থাকা একত্ব অর্থাৎ কেশবত্বের অনুভূতি এত প্রবলভাবে এবং গভীরভাবে প্রবেশ করে গেছে যে, সাধারণ কিন্তু সুশিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত সমাজের জন্যও গণপতি আর্যদের দেবতা, বৈদিকদের দেবতা, ছোট ছোট গোষ্ঠীর দেবতা অথবা যাদের অস্তিত্ব বেদে নেই এবং পুরাণ থেকে উৎপন্ন দেবতা, এই ধরনের বিতর্কের কোনো অর্থই হয় না। এই বিতর্কগুলো ইতিহাসের কিছু সৎ গবেষক অথবা তথাকথিত নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের জন্যই হয়। সত্যিকারের এবং সৎ ইতিহাস গবেষকরা তাদের করা যেকোনো দেবতা-বিষয়ক গবেষণাকে কেবল সংস্কৃতির ইতিহাসের পথপ্রদর্শক স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করেন, অন্যদিকে কুৎসিত বুদ্ধি নিয়ে এই ধরনের গবেষণা যারা করেন, তারা সমাজে বিভেদ তৈরি করার জন্যই এই ধরনের গবেষণা ব্যবহার করেন; তবে যেভাবেই এবং যার দ্বারাই দেবতা-বিষয়ক গবেষণা করা হোক অথবা নিজের মতামত অনুযায়ী দেবতা সম্পর্কে বিচার উপস্থাপন করা হোক, তবুও সেই দেবতার আধ্যাত্মিক স্তরে থাকা অস্তিত্বের কখনও কোনো বিপদ হতে পারে না।

সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু ব্রহ্মণস্পতিকে দুর্বা দিয়ে অর্চনা করছেন।
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু ব্রহ্মণস্পতিকে দুর্বা দিয়ে অর্চনা করছেন।

গণপতিকে যারই দেবতা মানা হোক না কেন, 'বিশ্বের ঘনপ্রাণ' এই গণপতির মূল রূপের কোনো পরিবর্তন হয় না অথবা (এই রূপ) কখনও নষ্ট হবে না, কারণ গণপতি কোনো গবেষকের গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত এবং প্রসিদ্ধ হননি; বরং গণপতি এই দেবতা তার মূল রূপ থেকেই ভক্তি এবং জ্ঞানের সমন্বয় সাধনকারী ঋষিদের চিন্তাধারা দ্বারা প্রকাশিত হয়েছেন, ভক্তদের হৃদয়ে প্রেম দ্বারা সিদ্ধ হয়েছেন এবং উপাস্য ও উপাসকের মধ্যে একে অপরের প্রতি থাকা প্রেমের কারণে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। এই কারণেই ঋগ্বেদে বর্ণিত ব্রহ্মণস্পতি অন্য কোনো দেবতা এবং তাকে কেবল গণপতি নামে সম্বোধন করা হয়েছিল, এই যুক্তির সাথে ভক্তহৃদয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। শিব ও পার্বতীর পুত্র এই গণপতি এই কারণেই সমস্ত উপাসক এবং পন্থের শুভকার্যে প্রথম সম্মানের অধিকারী হন। শৈব, দেবী-উপাসক, বৈষ্ণব, সূর্যোপাসক-এর মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়েও গণপতি একটি সুন্দর সেতু তৈরি করেন।

অথর্ববেদে বর্ণিত শ্রী গণপতি-অথর্বশীর্ষ অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় আজও প্রচলিত এবং সর্বমান্য গণপতির রূপের, আয়ুধের এবং স্বভাববিশেষের বর্ণনা করে। এই অথর্বশীর্ষেও এই গণপতির জন্য সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, 'তুমি রুদ্র, বিষ্ণু, অগ্নি, ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, বরুণ সবকিছুই।' তাহলে এই সমস্ত রূপের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গগুলো গণপতির ঐতিহাসিক প্রসঙ্গের সাথে মিলিয়ে দেখা কী কাজে আসবে? এই ধরনের গবেষণা অর্থাৎ যাদের অনেক অবসর সময় আছে, তাদের দ্বারা করা নিরর্থক এবং ফাঁকা কথা এবং এগুলোর সংস্কৃতির সংরক্ষণে বিন্দুমাত্রও কোনো ব্যবহার নেই।

ব্রহ্মণস্পতির মূর্তিতে অভিষেক করা হচ্ছে।
ব্রহ্মণস্পতির মূর্তিতে অভিষেক করা হচ্ছে।

জ্ঞানমার্গে যাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনো বিতর্কই নেই, সেই শ্রেষ্ঠ সন্ত শ্রী জ্ঞানেশ্বর মহারাজ জ্ঞানেশ্বরী (গ্রন্থ) এর শুরুতেই -

'ওঁ নমো জি আদ্য। বেদ প্রতিপাদ্যা।

জয় জয় স্বসংবেদ্য। আত্মরূপা॥

দেবা তুচি গণেশু। সকলার্থমতিপ্রকাশু।

মহণে নিবৃত্তিদাশু। অবধারিজো জি॥'

এইভাবে সুস্পষ্টভাবে শ্রী মহাগণপতি সম্পর্কে লিখেছেন। যদি গণপতি এবং ব্রহ্মণস্পতি একই না হতেন এবং বেদে গণপতির প্রতিপাদন করা হয়নি বলে মনে করা হয়, তাহলে শ্রী জ্ঞানেশ্বর মহারাজের এই বচন তার বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ইতিহাসের অধ্যয়ন এবং গবেষণা যে যত উপায়েই করুক না কেন, তবুও সময়ের প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রবাহে উপলব্ধ উপায় এবং প্রসঙ্গের হাজার গুণ জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গবেষণা করার সময় কেউ নিজের মতামতকে একমাত্র সত্য হিসেবে রাখতে পারে না। জীবন্ত সংস্কৃতির একটি প্রধান লক্ষণ হলো, তার প্রবাহিত হতে থাকা অর্থাৎ সংস্কৃতির প্রবাহ মানে আক্ষরিক অর্থেই শত শত কারণে ঘটা পরিবর্তন। এই পরিবর্তনগুলো থেকে পুরোপুরি এবং অবিচলভাবে যা অবশিষ্ট থাকে, তা কেবল সম্পূর্ণ সত্যই এবং সত্য মানেই প্রকৃত বাস্তবতা নয়, বরং সত্য মানে পবিত্রতা উৎপন্নকারী বাস্তবতা এবং এমন পবিত্র বাস্তবতা থেকেই আনন্দ উৎপন্ন হতে থাকে এবং এই কারণেই ভক্তহৃদয়ের সম্পর্ক এমন 'সত্য' এর সাথে, কেবল কাগজ এবং প্রমাণের টুকরোগুলোর সাথে নয়।

বাপুর নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি বছর উদযাপিত শ্রী মাঘী গণেশোৎসবে সমবেত শ্রীগণপতি অথর্বশীর্ষ পাঠ।
বাপুর নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি বছর উদযাপিত শ্রী মাঘী গণেশোৎসবে সমবেত শ্রীগণপতি অথর্বশীর্ষ পাঠ।

ব্রহ্মণস্পতি-সূক্ত এবং অথর্বশীর্ষ গণপতির বৈদিক স্বরূপ প্রমাণ করে কি না, তার সাথে আমার একেবারেই কোনো সম্পর্ক নেই, কারণ হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজের ভক্তমানসে দৃঢ় এবং অধিষ্ঠিত প্রতিটি রূপই সেই ওঁকারের অর্থাৎ প্রণবের অর্থাৎ কেশবেরই রূপ, এই বিষয়ে আমার কখনও সন্দেহ ছিল না, নেই এবং থাকবেও না; কারণ কেশব মানে শব অর্থাৎ আকৃতি থেকে ঊর্ধ্বে থাকা চৈতন্যের মূল উৎস। যদিও পুরো বিশ্ব তার অস্তিত্ব অস্বীকার করুক, তবুও তার অস্তিত্ব নষ্ট হতে পারে না।'

অগ্রলেখ শেষ করতে গিয়ে সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখছেন -

'বন্ধুরা, এই কারণেই অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত আলোচনা না করে পুরো শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের সাথে পরমাত্মার উপাসনা করুন, কাজ সিদ্ধ করার জন্য শ্রী সমর্থ সবসময় আছেনই।'
ভগবান শ্রী ব্রহ্মণস্পতিকে ফুল অর্পণ করছেন সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু।
मराठी >> हिंदी >> English >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>>
মঙ্গলমূর্তি Mangalmurti

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে গণেশ ভক্তি

ভাগ - 1

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!Mangalmurti morya

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া!

ভাগ - 2

মোদ-ক Modak

মোদ-ক

ভাগ - 3

বৈদিক গণপতি Vaidik Ganapati

বৈদিক গণপতি

ভাগ - 4

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান Shree Mahaganapati -Devatavidnyan

শ্রীমহাগণপতি-দৈবতবিজ্ঞান

ভাগ - 5

No comments:

Post a Comment