Friday, 25 July 2025

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে - গণেশ ভক্তি - ভাগ - 3 - মোদ-ক

সদগুরু  অনিরুদ্ধ বাপুর  দৃষ্টিকোণ থেকে - গণেশ ভক্তি - ভাগ - 3 - মোদ-ক
সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুদ্বারা রচিত দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' পত্রিকার সম্পাদকীয় (০৬-০৯-২০০৬)

শ্রীগণেশের কথা মনে পড়লেই প্রত্যেক ভক্ত বা এমনকি নাস্তিকেরও প্রথমেই যে জিনিসটার কথা মনে পড়ে, তা হলো মোদক। আজকাল মাওয়ার মোদক পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মাওয়ার মোদক অনেকটা দুধের তৃষ্ণা ঘোলে মেটানোর মতো। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমি সবচেয়ে ভালোবেসে যে মোদক খেয়েছি, তা হলো আমাদের চিরাচরিত মোদক, যেখানে চালের গুঁড়ো মাখনে মেখে তৈরি করা হয় এবং ভেতরের পুরটা তাজা ও সুস্বাদু নারকেল কোরা দিয়ে বাড়িতে তৈরি করা ঘিয়ে ভাজা হয়। তার ওপর, মোদক খাওয়ার সময় সেটা ভেঙে আরও এক চামচ ঘি ঢেলে নেওয়া। সব বাচ্চাদের এই 'ঘিয়ে জবজবে' মোদকটা ভীষণ পছন্দের। এই চিরাচরিত মোদক হলো আহারের মধ্যে থাকা স্নিগ্ধ, সৌম্য (শান্ত) ও গুরু (গম্ভীর) গুণের চরম প্রকাশ। আর ঠিক এই কারণেই মূলাধার চক্রের নিয়ন্ত্রণকারী, অর্থাৎ অত্যন্ত উষ্ণ ও লঘু স্থানের অধিপতি শ্রীমহাগণপতির জন্য এটিই সর্বোত্তম নৈবেদ্য।

আজকের পরিস্থিতিতে হয়তো সবার পক্ষে এমন মোদক তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের উচিত এমন চিরাচরিত মোদক বানিয়ে অত্যন্ত ভালোবেসে শ্রীমহাগণপতিকে অর্পণ করা। দূর্বা ও শমী পত্রের বাহ্যিক পূজা এবং চিরাচরিত মোদকের নৈবেদ্য সত্যিই উগ্র, শুষ্ক ও লঘু গুণগুলিকে নষ্ট করে স্নিগ্ধতা, সৌম্যভাব (শান্তভাব) ও গুরুত্ত্ব (স্থিরতা) স্থাপন করে। এর ফলে, সেই মঙ্গলমূর্তি বরদাবিনায়ক বিঘ্ন নাশ করার জন্য প্রত্যেকের প্রাণময় দেহে ও মনোময় দেহে আবির্ভূত হন।
 
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে গণপতি বাপ্পার শুভ আগমন।
 
মোদক বললেই আমার একটা খুব পুরোনো গল্প মনে পড়ে যায়। এক সম্রাট ছিলেন। তিনি নিজে অত্যন্ত বিলাসী স্বভাবের ছিলেন এবং তিনি কোনোরূপ অধ্যয়ন করেননি। তাই তাঁর বাবা তাঁকে সিংহাসনে বসানোর সময়, সেই বিদ্যাহীন রাজপুত্রের বিয়ে একজন অত্যন্ত বিদূষী ও সুশিক্ষিত রাজকন্যার সঙ্গে দিয়েছিলেন। সেই মূর্খ রাজা ও তাঁর বিদূষী, পতিব্রতা রাণী পুরো রাজপরিবার নিয়ে এক সরোবরে জলকেলির জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে সরোবরে জলকেলি করার সময় রাজা রাণীর গায়ে হাত দিয়ে জল ছিটোতে লাগলেন। বিয়ের আগে পর্যন্ত সংস্কৃতই যাঁর পড়ার ভাষা ও বলার ভাষা ছিল, সেই রাণী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, "মোদকৈঃ সিঞ্চ"। তৎক্ষণাৎ রাজা এক সেবককে কাছে ডেকে তার কানে কিছু বললেন। কিছুক্ষণ পরেই সেবক মোদকে ভরা পাঁচ-ছয়টা পাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হলো এবং রাজা একের পর এক মোদক নিশানা করে রাণীর দিকে ছুঁড়তে লাগলেন। এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, রাণী কিছুক্ষণ পরেই নিজেকে সামলে নিলেন এবং অন্যান্য রাজনারী ও অমাত্যদের মুখের কুটিল হাসি দেখে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হলেন; কারণ রাণী বলতে চেয়েছিলেন, "মা উদকৈঃ সিঞ্চ" অর্থাৎ 'আমায় জল দিয়ে ভিজিয়ে দিও না'। কিন্তু শুধু বলতে পারার মতো সংস্কৃত জানা সেই মূর্খ রাজার সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম জানা না থাকায়, তিনি 'মোদকৈঃ' কথাটার সন্ধিবিচ্ছেদ না করেই ভুল অর্থ বুঝেছিলেন। এরপর গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়, কিন্তু আমার তো মনে হয়, রাণীর গায়ে মোদক ছুঁড়ে মারা সেই বোকা রাজাটাই আজকাল নানা রূপে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
 
মোদক নৈবেদ্য সমর্পয়ামি। (আমি মোদকের নৈবেদ্য ভক্তিসহকারে অর্পণ করছি।)
সদ্‌গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুর বাসভবনে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত গণেশোৎসবে অপরিমেয় প্রেম ও ভক্তিসহকারে গণপতি বাপ্পাকে মোদকের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয়।

গণপতি মোদক ও দূর্বা ভালোবাসেন বলে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই জিনিসগুলি অর্পণ করাটাই নিয়ম। তেমনই, সেই পরমাত্মার রূপও অনেক, তাই বিভিন্ন ধরনের মূর্তি বানানোও অত্যন্ত সঠিক। কিন্তু সেই গণপতিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য জায়গায় জায়গায় লাইন দেওয়াটা তো সেই রাজারই পুনরাবৃত্তি। আমার একটা জিনিস মাথায় ঢোকে না যে, গণপতিকে যদি সত্যিই মোদক এতই প্রিয় হয়, তাহলে তিনি জায়গায় জায়গায় শুধু দুধই কেন পান করেন? মোদক কেন খান না? আর সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রশ্নটা আমাদের কারোর মনেও আসে না। সেই মঙ্গলমূর্তি পরমাত্মা ভক্তের ভালোবেসে দেওয়া সামান্য বাসি রুটির টুকরোও অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করেন, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। মূর্তির সামনে রাখা নৈবেদ্যের থালা থেকে যদি এক কণাও কম না হয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। গীতায় তো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে সমস্ত ভক্তদের এই আশ্বাস দিয়েছেন। আসল কথা হলো, পরমাত্মার এই সব করে নিজের মাহাত্ম্য বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তেমনই মানুষের মনে ভক্তি বাড়ানোর জন্যও তাঁর এই ধরনের পরিকল্পনার কোনো দরকার নেই। ভক্ত ও অভক্ত প্রত্যেকের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব সম্পর্কে যিনি অবগত এবং যাঁর হাতেই প্রত্যেকের কর্মফল নির্ধারিত, সেই সত্যিকারের পরমাত্মার এই সব অদ্ভুত জিনিসের কখনো প্রয়োজন হয় না।

সম্পাদকীয় শেষ করে সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লিখছেন -

'বন্ধুরা, সেই পরমাত্মা যা চান, তা হলো তোমাদের অচল শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং কৃতজ্ঞতার অনুভূতি নিয়ে করা ভগবানের ও ভগবানের অসহায় সন্তানদের সেবা। এটাই আসল নৈবেদ্য, না, এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য। এই নৈবেদ্য পরমাত্মা পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং তার সহস্রগুণ ফল প্রসাদ হিসেবে ভক্তকে ফিরিয়ে দেন। মোদক নৈবেদ্য হিসেবে অবশ্যই অর্পণ করুন এবং নিজেও আনন্দের সাথে খান, কিন্তু 'মোদ' মানে যে 'আনন্দ' তা ভুলবেন না। পরমাত্মা ও অন্যদের আনন্দ হয় এমন আচরণ করাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মোদক।'

मराठी >> हिंदी >> English >> ગુજરાતી>> ಕನ್ನಡ>> తెలుగు>> தமிழ்>>

Wednesday, 23 July 2025

সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস সবকিছু করতে পারে! - শুভাবীরা ত্রাসি, হংকং

সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস সবকিছু করতে পারে!  - শুভাবীরা ত্রাসি, হংকং

'নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস - এই দুটো জিনিস জীবনে থাকা খুবই জরুরি'।  এই শ্রদ্ধাময়ী মহিলার এই কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, সদ্গুরুর ওপর অটল বিশ্বাস কীভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সেটা এই অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। 

============

হরি ওম। আমি মনে করি, সদ্গুরু অনিরুদ্ধ বাপুর কৃপাদৃষ্টি আমার পুরো পরিবারের ওপর সদাসর্বদা থাকাটা আমাদের পরম সৌভাগ্য। আমার স্বামীর নাম বিরাজসিংহ ত্রাসি, ছেলের নাম গৌরবসিংহ ত্রাসি এবং আমরা হংকংয়ে থাকি। আজ (যখন এই গল্পটা বলছি) হংকংয়ে আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের বিশ বছর হয়ে গেছে।  বাপুর কাছে আসার পর থেকে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাপুর আমার উপর সবচেয়ে বড় কৃপা হল যে তিনি আমাদের কাছে কোনো বড় বিপদকে ঘেঁষতে দেননি। তাঁর চরণে আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মাথা নত করি। শ্রীরাম।

প্রত্যেকের জীবনে অনেক সমস্যা আসে। আমার জীবনেও এমন অনেক উত্থান-পতন এসেছে। প্রতিবারই বাপু আমাদের সঙ্গে থাকায় আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পেরেছিলাম। 

২০০৭ সালে আমরা হংকংয়েই আমার স্বামীর পঞ্চাশতম জন্মদিন পালন করেছিলাম। সেদিন আমরা ভালোবাসার সঙ্গে বাপুর পাদুকা পূজন করেছিলাম। এর তারপরই আমাদের বাড়িতে একটা ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আমার শাশুড়িমার একদিন সকাল ১১টা নাগাদ খুব খিদে পেয়েছিল। ঠাণ্ডার দিন ছিল, তাই আমি আমার শাশুড়িমাকে বলেছিলাম, "চলো, আমরা গরম গরম সিঙ্গারা খাই।" আমি সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম এবং সিঙ্গারা প্রস্তুত করার জন্য গ্যাস জ্বালিয়েছিলাম আর একটা ছোট কড়াইতে তেল দিয়ে সেটা হালকা আঁচে বসিয়েছিলাম। হঠাৎ আমার ফোনের রিং বাজতে শুরু করেছিল। গিয়ে দেখি, একটা ভুল ফ্যাক্স এসেছে। আমার ফ্যাক্স মেশিন সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায়, ভুল করে আমি এমন একটা বোতাম টিপে দিয়েছিলাম যে, একের পর এক কাগজ ফ্যাক্স মেশিন থেকে বের হতে শুরু করে দিয়েছিল। আমি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। আমি আসলে খুব ভীরু প্রকৃতির হওয়ায় ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। 

এই তাড়াহুড়োতে আমি গ্যাস জ্বালানো আছে সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরেই কিছু পড়ার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, জানালা খোলা থাকায় হাওয়ায় হয়তো কিছু নিচে পড়ে গিয়েছে। আমরা বেডরুমে ছিলাম। যখন আমি বেডরুম থেকে জানালা বন্ধ করার জন্য বাইরে এসেছিলাম, তখন রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেছিলাম। আমার রান্নাঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দরজা খুলতেই ভেতরের ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আমার মনে পড়ে গিয়েছিল যে, কড়াইটা গ্যাসে বসানো ছিল। এর আগে আমি কখনো এত বড় আগুন দেখিনি। আমার পুরো রান্নাঘর ধোঁয়া আর আগুনে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। যে আওয়াজ হচ্ছিল, সেটা সিলিংয়ের টিউবলাইট আর বাল্ব ফেটে যাওয়ার আওয়াজ ছিল। সেগুলো ফেটে নিচে পড়ছিল এবং গ্যাসের চুলার ওপর যে চিমনি ছিল, তার টুকরোগুলোও জ্বলন্ত অবস্থায় নিচে পড়তে শুরু করেছিল। 

আমি এই দৃশ্য দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং বাপুকে ডেকে বলেছিলাম, 'বাপু, তুমি সবকিছু ঠিক করে দাও'। তারপর এমনভাবে আমার মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি এসেছিল যে, আমি কিছু না ভেবেই রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম।  ইলেকট্রিক্যাল বক্স আমাদের রান্নাঘরেই থাকে। সেটা বন্ধ করার সাহস আমার হয়নি, কারণ আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আমার সামনে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমার শাশুড়িমা আমাকে বারবার সাহস দিয়ে বলেছিলেন, "বাপু আমাদের সাথে আছেন, একদম ভয় পেও না।" তাই আমি সাহস করে পরিস্থিতি সামলাচ্ছিলাম। আমি ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করেছিলাম এবং ষষ্ঠ তলা থেকে দৌড়ে ম্যানেজমেন্ট অফিসে গিয়েছিলাম। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের এখানে পুলিশ, হাসপাতালের কর্মী, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয়ে গিয়েছিল। বিদেশে কে প্রতিবেশী, সেটাও কেউ জানে না। সেদিন অবাক করার মতো ব্যাপার হয়েছিল যে, আমাদের প্রতিবেশীরাও আমাদের সাহায্য করেছিলেন। এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও আমাদের সবার মধ্যে বিশ্বাসের কোনো অভাব ছিল না এবং আমাদের কারোরই কোনো আঘাত লাগেনি। এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল।

আমার স্বামী বাড়িওয়ালাকে ফোন করেছিলেন এবং দুর্ঘটনার গুরুত্ব জানিয়েছিলেন। হংকংয়ে নিয়মকানুন খুব কঠোর এবং আমাদের বাড়িওয়ালার স্বভাবও খুব কঠোর ছিল। এত কিছুর পরেও তিনি কীভাবে ক্ষতি হয়েছে তা দেখতে বা টাকা নিতেও বাড়িতে আসেন নি। বরং তিনি বলেছিলেন, "যা কিছু মেরামতের কাজ হবে, আপনারা নিজেরাই তা করিয়ে নিন।" ব্যাপক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও কারোরই কোনো আঘাত লাগেনি। বাপু আমাদের সবার যত্ন নিয়েছিলেন। অনেক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা সবাই নিরাপদে ছিলাম। বাপুর অকারণ করুণা যারা জীবনে লাভ করে, তাদের জীবনে সুখ, শান্তি এবং আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। 

এবার আমার জীবনের দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা বলছি। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সদ্গুরুর প্রতি অটল বিশ্বাস - এই দুটো জিনিস জীবনে থাকা খুবই জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনের সব কাজ সহজেই সম্পন্ন হয়। সদ্গুরুর প্রতি বিশ্বাসের কারণে ভক্তের শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমার আত্মবিশ্বাস প্রথমে কম থাকায় আমি প্রতিবারই খুব ভয় পেতাম। তার ওপর ছোটবেলা থেকেই আমার জলের ভয় ছিল। আমি জলে ডুবে যাচ্ছি, এমন অনেক স্বপ্ন আমি সব সময় দেখতাম। 

আমাদের হংকংয়ের উপাসনা কেন্দ্রের একটি পরিবার বাপুর পাদুকা পূজনের আয়োজন বোটে করেছিল। এটি আনন্দের উৎসব ছিল, কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগছিল। এর কারণ ছিল যে, প্রথমে এর জন্য আমাকে বোটে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের ১০০ ফুট উঁচুতে হেঁটে উঠতে হবে। আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করতেন বলে তাঁর কোনো অসুবিধা মনে হয় নি এবং ছেলে তো বোটে, তাও এত উঁচুতে যাবে বলে খুবই উত্তেজিত ছিল। আমার কিন্তু ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে এই চিন্তাও এসেছিল যে, পূজার জন্য ওনারা কি অন্য কোনো জায়গা খুঁজে পান নি? আমি মনে মনে বাপুকে বলেওছিলাম, 'বাপু, এত উঁচুতে, তাও জলে গিয়ে পূজা কেন করতে হবে ওনাদের'? আমার ছেলে আমাকে সাহস দিতে দিতে বলেছিল, "মা, একদম ভয় পাবে না। তুমি আমাদের দুজনের মাঝখানে হাঁটবে।" একইভাবে আমার স্বামী বললেন, "ওপরের দিকে ওঠার সময় একটুও পেছনে ফিরে তাকাবে না।" আমি বাপুর নাম জপতে জপতে ওপরের দিকে উঠছিলাম। এর মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছিল। এই সব ভয়ের কারণে আমি আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলাম। 

আমরা নিরাপদে ১০০ ফুট ওপরে পৌঁছালাম এবং সেখানে প্রথমে আমার দেখা হল একজন ৭০ বছর বয়সী, আমাদের শ্রদ্ধাবান বন্ধুর মায়ের সঙ্গে। তিনিও আমাদের মতোই ওপরে উঠে এসেছিলেন এবং আনন্দ সহকারে আমাদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে দেখেই আমার নিজের খুব লজ্জা লাগছিল। আমি জলকে ভয় পেতাম, কিন্তু বাপু আমার সাথে আছেন - এই অটল বিশ্বাস যদি আমার মধ্যে থাকে, তাহলে আমার আত্মবিশ্বাস অবশ্যই বাড়বে। কিন্তু আমি আমার নিজের ভয়ে আটকে ছিলাম। বাপুর কৃপায় এই ভুলটা আমার নজরে এসেছিল। এই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা মহিলা যদি এত উঁচুতে আসতে পারেন, তাহলে আমার উচ্চতা ও জলকে ভয় পাওয়ার কারণ কী? এই চিন্তা আসতেই আমি পাদুকা পূজনে আনন্দ ও হাসিমুখে অংশগ্রহণ করেছলাম, কারণ আমার মনের ভয় তখন বাপুর প্রতি বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

সেদিন থেকে আমার জলের ভয় চলে গিয়েছিল এবং স্বপ্ন দেখাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আত্মবিশ্বাস বাড়ার কারণে এখন আমার মধ্যে খুব ভালো পরিবর্তন এসেছে। ভয় এবং হীনমন্যতার কারণে আমি আমার অনেক ইতিবাচক জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার লেখালেখি এবং এমন অনেক শখ আমি এখন আবার শুরু করতে পেরেছি। বাপুভক্তির কারণে অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান হয়। বাপুর কাছে আমার একটাই প্রার্থনা। 'বাপু, তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস যেন এভাবেই সব সময় বাড়তে থাকে, এটাই তোমার চরণে আমার প্রার্থনা।

ગુજરાતી >> ಕನ್ನಡ >>

Tuesday, 22 July 2025

ওম্ মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া! সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপুদ্বারা রচিত দৈনিক প্রত্যক্ষ পত্রিকার অগ্রলেখ (১৫-০৯-২০০৭)


ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়ির পরিবেশটা ছিল পুরো শুদ্ধ বৈদিক সংস্কারে ভরা, কিন্তু তাতে অনাবশ্যক নিয়ম, জাত-পাত, কিংবা গোঁড়া কর্মকান্ডের ছিটেফোঁটাও ছিল না। মাই (দিদিমার মা) আর দিদিমা সংস্কৃত সাহিত্যে এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে সব সংহিতা তাদের মুখস্থ ছিল। তাই বৈদিক মন্ত্রের শুদ্ধ আর ছন্দবদ্ধ উচ্চারণ সবসময় কানে আসত। আজও ওদের দুজনের গলার বৈদিক মন্ত্র আর সূক্তের মিষ্টি সুর আমার হৃদয়ে বেজে ওঠে। গণপতি পূজার পর যে মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি বলা হতো, সেটা আজকালকার ‘শর্টকাট’ মতো ‘ওঁ যজ্ঞেন যজ্ঞময়জন্ত....’ থেকে শুরু না হয়ে, ‘ওঁ গণানাম ত্বা গণপতীম হাবামাহে....’ থেকে শুরু হতো আর প্রায় আধ থেকে পৌনে এক ঘণ্টা ধরে চলত। তার মধ্যে আরোহণ, অবরোহণ, আঘাত, উদ্ধার ইত্যাদি সব নিয়ম মেনেও সেই মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলিতে মাধুর্য, কোমলতা আর সহজতা ঠিক তেমনই জীবন্ত থাকত, কারণ সেই মন্ত্রোচ্চারণে শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর কোনো ইচ্ছা ছিল না, বরং পুরো ভক্তিরসে ভরপুর এক প্রফুল্ল হৃদয় থাকত।

পরে আমার পাঁচ বছর বয়সে, আমার দিদিমার বাড়িতে অর্থাৎ পণ্ডিতদের বাড়িতে গণপতির সামনে ওঁরা দুজনেই আমাকে প্রথম মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলির শাস্ত্রীয় পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। তখন আমার মায়ের তিন কাকীমা, মা আর দিদিমা, এই পাঁচজন মিলে আমাকে বরণ করে অনেক মোদক খেতে দিয়েছিলেন। সেই সময় পর্যন্ত আমি আমার দিদিমার বাড়িতে একমাত্র নাতি ছিলাম, আর তাই পুরো পাধ্যে ও পণ্ডিত পরিবারের খুব আদরের ছিলাম। সেই দিনই মাই (দিদিমার মা) আমাকে পাধ্যে পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে বালগণেশের প্রতিস্থাপন পদ্ধতিও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আর সেই কারণেই আজও আমাদের বাড়িতে গণেশ চতুর্থীতে যে মূর্তি স্থাপন করা হয়, সেটা বালগণেশেরই হয়।

আমি একবার মাইকে (দিদিমার মা) জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘প্রতি বছর বালগণেশই কেন গো?’ মাই (দিদিমার মা) আমার গালে হাত বুলিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, “আরে বাপুরায়া, শিশু ঘরে এলে আমরা যদি তার যত্ন নিই, তাকে আদর করি, তাহলে সেই শিশুর পেছনে পেছনে তার মা-বাবাও চলে আসেন আর সুখে থাকেন। এই বালগণেশের প্রতি ভক্তদের আদর-যত্নের কারণে পার্বতী মাতা আর পরমশিবেরও আপনা আপনিই স্বাগত ও পূজা হয়ে যায়। আর দ্বিতীয়ত, অচেনা সাধারণ মানুষের ফুটফুটে ছোট বাচ্চার সাথে ব্যবহার করার সময়ও আমাদের মনে আপনা আপনিই এক নিষ্কাম প্রেম প্রকাশ পায়। তাহলে এই অত্যন্ত সুন্দর মঙ্গলমূর্তির বালরূপের সান্নিধ্যে ভক্তদের মনে ভক্তিপ্রেম তেমনই নিষ্কাম ও পবিত্র হবে না কি?”
 


মাইয়ের (দিদিমার মা)  এই অনুভূতিগুলো ছিল এক অত্যন্ত শুদ্ধ ও পবিত্র ভক্তিময় হৃদয়ের সহজ প্রবৃত্তি। আমরা সবাই, আক্ষরিক অর্থে কোটি কোটি মানুষ, গণপতিকে ঘরে বসাই, কেউ দেড় দিনের জন্য তো কেউ দশ দিনের জন্য। বিভিন্ন প্রকারের গণেশ মূর্তি থাকুক না কেন, কিন্তু এই বিঘ্নহন্তা গণেশের সাথে আমরা কি এমন আন্তরিক আর আপন একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করি?

ঘরে আসা গণপতিকে এই ভাবনাতেই কিছু জায়গায় আনা হয় এই ভেবে যে কেবল বাড়ির ঐতিহ্য যেন ভাঙা না হয়, ভাঙলেই বিপদ ঘটবে, কিছু জায়গায় মানত পূরণের জন্য আনা হয়, আবার কিছু জায়গায় শুধু উৎসব ও মজা করার জন্য আনা হয়। এমন গণপতি স্থাপনায় মন্ত্র থাকে, মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি থাকে, আরতি থাকে, মহানৈবেদ্য থাকে এবং রীতিনীতি ও শাস্ত্র পুরোপুরি পালনের ভয়ে দৌড়ঝাঁপও থাকে। কিন্তু এই সব গোলমালের মধ্যে যা হারিয়ে যায়, তা হলো এই আরাধনার মূল সার অর্থাৎ প্রেমময় ভক্তিভাব।

মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া ও সুখকর্তা দুঃখহর্তা, এই শ্রীগণপতির উপাধিগুলো সবারই জানা। বরং এই ‘সুখকর্তা দুঃখহর্তা’ উপাধির কারণেই তো আমরা গণপতিকে ঘরে আনতে রাজি হই, কিন্তু ‘মঙ্গলমূর্তি’ এই উপাধির কী হবে? সেই সিদ্ধিবিনায়ক সবকিছু মঙ্গলময় করবেনই, কিন্তু তাকে ঘরে আনার পর আমরা তাকে কতটা মঙ্গলময় পরিবেশে রাখি? এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

শুধু দূর্বার বড় বড় মালা পরিয়ে, একুশটি মোদক সকাল-সন্ধ্যা তার সামনে রেখে, লাল ফুল নিবেদন করে আর আরতির সময় তাল দিয়ে কি আমরা আমাদের মতো করে আর আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মাঙ্গল্য তৈরি করি? উত্তর বেশিরভাগ সময়ই ‘না’ হবে।

তাহলে সেই মঙ্গলমূর্তিকে আমাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ‘মাঙ্গল্য’ আমরা তাকে কিভাবে অর্পণ করতে পারি? উত্তর খুব সহজ আর সরল। সেই মূর্তিকে স্বাগত জানানোর সময় এই ভাবনা রাখুন যে এক বছর পর আপনার প্রিয়জন ঘরে ফিরে আসছে; একুশটি মোদকসহ নৈবেদ্যে ভরা থালা তার সামনে রেখে তাকে আদর করে অনুরোধ করুন, ঘরে আসা অতিথিদের আতিথ্যের আড়ম্বরের চেয়ে সেই গণেশের আরাধনার দিকে বেশি মনোযোগ দিন, আরতি বলার সময় কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন না আর প্রধানত এই মহাবিনায়ক যখন তার স্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হন, তখন হৃদয় যেন গদগদ হয়ে ওঠে এবং প্রার্থনা হোক অধিকারভরা ও প্রেমময়, ‘মঙ্গলমূর্তি মোরিয়া, পরের বছর তাড়াতাড়ি এসো।’

অগ্রলেখের শেষে সদ্গুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু লেখেন -
‘আমার শ্রদ্ধাবান বন্ধুরা, ‘পরের বছর তাড়াতাড়ি এসো’, এই বাক্যটির অর্থ ভালোভাবে বুঝে নিন। আসার তারিখ তো ঠিক করাই থাকে, তাহলে শুধু মুখে ‘তাড়াতাড়ি এসো’ বলার পেছনে কী অর্থ থাকতে পারে? এতে একটাই অর্থ আছে আর তা হলো পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করবেন না, দেব মোরিয়া, আপনি রোজই আসতে থাকুন আর সেটাও তাড়াতাড়িই ঘটুক।’

Friday, 18 July 2025

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর দৃষ্টিকোণ থেকে গণেশ ভক্তি

আমরা যখন কোনো শুভ কাজ শুরু করি, তখন তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার জন্য আমাদের বিঘ্নহর্তা শ্রী গণেশকে স্মরণ করি, পূজা করি এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। ছোটবেলায় যখন আমরা অক্ষর লিখতে শিখি, তখনও আমরা প্রথমে 'শ্রী গণেশায় নমঃ' লিখতেই শিখি। যতই বিভিন্ন দেবতার মন্দির থাকুক না কেন, শ্রী গণেশ কিন্তু প্রতিটি মন্দিরের গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারে বিরাজমান থাকেনই। 'মঙ্গলমূর্তি শ্রী গণপতি' সত্যিই সমস্ত শুভ কাজের অগ্রগণ্য, আমাদের ভারতজুড়ে ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই এক প্রিয় দেবতা।

এই গণপতি সম্পর্কে, দৈনিক 'প্রত্যক্ষ'-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক ডাঃ শ্রী অনিরুদ্ধ ধৈর্যধর যোশী (সদগুরু শ্রী অনিরুদ্ধ বাপু) তাঁর অধ্যয়ন ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণাগুলো অনেক সম্পাদকীয়র মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। এই সম্পাদকীয়গুলো কেবল তথ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভক্তদের মনের প্রশ্নের উত্তর দেয়, ভক্তিকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং গণপতির বিভিন্ন রূপের গভীরে পরিচয় করিয়ে দেয়।

এই সম্পাদকীয়গুলোতে বাপু বেদ, পুরাণ, সন্ত সাহিত্য থেকে গণপতির স্বরূপ এবং তার পেছনের দর্শন খুব সহজ, সরল ভাষায় উন্মোচন করেছেন। ব্রহ্মণস্পতি-গণপতি ধারণা, বিশ্বের ঘনপ্রাণ গণপতি, গণপতির জন্মকথার পেছনের তত্ত্ব, সার্বজনীন গণেশ পূজার পেছনের ভূমিকা, মূলাধার চক্রের অধিষ্ঠাতা গণপতি, গণপতির প্রধান নামগুলো, তাঁর বাহন মূষিকরাজ, ব্রতবন্ধের গল্প, মোদকের গল্প এবং সেই গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ... এই সমস্ত বিষয় বাপু এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন তিনি আমাদের মনের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

 

গণপতি এই দেবতাসম্পর্কিত এই ব্যাখ্যা শ্রদ্ধাবান ভক্তদের জন্য কেবল তথ্য নয়, বরং আবেগপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের শ্রদ্ধাকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

দৈনিক 'প্রত্যক্ষ' থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত এই সম্পাদকীয়গুলো এখন ব্লগপোস্ট আকারে আমাদের সকলের জন্য উপলব্ধ হচ্ছে — বাপুদের দেওয়া সেই অমূল্য চিন্তাভাবনার সুবাস আমাদের সবার মনে ছড়িয়ে পড়ুক, এই একটিই উদ্দেশ্য নিয়ে।

Thursday, 21 July 2022

যিনি নিজেকে সদগুরুর চরণে সমর্পণ করেন এবং তাঁকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন। - সুদেশ ঘরত, বোয়সার


আমাদের জন্য আমাদের সদগুরু অসংখ্য কাজ নিত্য করে চলেছেন কিন্তু কখনই তিনি নিজেকে জাহির করেন না । কোনো শ্রদ্ধাবান যখন কোনো কাজ করেন, তা সে যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তা বৃহৎ হয়ে দেখা দেয় । আমার অভিজ্ঞতয় অন্তত তাই বলে ।

সদগুরু অনিরুদ্ধ বাপুর আমার জীবনে অনেক অনুভব আছে । এইখানে আমি তার কিছু ব্যক্ত করেছি ।

আমার স্ত্রী, সুষমা পঞ্চশীল পরীক্ষার প্রথম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন । পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর তিনি হতাশ হয়ে পড়েন । তার কারণ তার উত্তরপত্রে লেখা ছিল "পরের বার" (অনুগ্রহ করে আবার পরীক্ষায় অংশ নিন)। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আর কখনোই তিনি পঞ্চশীল পরীক্ষায় অংশ নেবেন না । তার কারন তার মনে হয়েছিল যে তিনি এই পরীক্ষার জন্য যোগ্য নন ।

তার এই অবস্থায় আমি তাকে বাপুর কথা বলে অনুপ্রাণিত করেছিলাম যে বাপুর মতে পঞ্চশীল পরীক্ষা আমাদের জ্ঞানের পরীক্ষা নয় । এটি আসলে আমাদের ভক্তির পরীক্ষা । আমি সুষমাকে বলেছিলাম যে তিনি যেন আবার পঞ্চশীলের প্রথম পরীক্ষায় বসেন । আমি সুষমাকে বাপুর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে বলেছিলাম । বাপু শ্রদ্ধাবানদের উদ্দেশ্যে আগেই ঘোষণা করেছিলেন - "আমি তোমাকে কখনোই ত্যাগ করবো না" (I will never forsake you) । 

সুষমা কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে নিজেই অনুভব করেছিলেন যে তার আবার পরীক্ষাতে অংশ নেওয়া দরকার । তিনি সদগুরুর উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়েছিলেন এবং এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছিলো । পরম পূজ্য বাপুর কৃপায়, সুষমা চতুর্থ পরীক্ষা অবধি পৌছন এবং  চতুর্থ পরীক্ষায় তিনি ডিস্টিংকশন লাভ করেন । এই ভাবেই বাপু তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মাধ্যমে সুষমাকে পঞ্চশীল পরীক্ষায় সাফল্যের শিখরে উঠতে সাহায্য করেন ।

যিনি  সদগুরুর চরণ হৃদয়ে  ধারণ করেছেন এবং তাঁর প্রতি অটল বিশ্বাস রেখেছেন।

আমার মেয়ে শ্রেয়া আমাদের সাথে পরম পূজ্য সুচিত দাদার ক্লিনিকে সুষমার উত্তরপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন । দাদা শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "শ্রেয়া বীরা, তুমি কি করো?"

শ্রেয়া উত্তর দিয়েছিলেন, "আমি ডি এড পড়ছি ইংরেজিতে । আসলে আমার ফার্মেসী পাড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাপু আমাকে ডি এড করার জন্য গাইড করেছিলেন" । দাদা জিজ্ঞেস করেছিলেন "বাপুর সাথে তোমার কোথায় দেখা হয়েছিল ?" শ্রেয়া উত্তর দিয়েছিলেন - "বাপু আমার স্বপ্নে এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন" । দাদা তার উত্তরে চমকে উঠে বলেছিলেন, "কী ! তোমার স্বপ্নে ? আর তুমি রাজি হয়ে গেলে ?" এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেয়া উত্তর দিয়েছিলেন - "হ্যাঁ, আমার স্বপ্নে হলেও, বাপুর আদেশই আমার জন্যে সঠিক ।" দাদা বলে উঠেছিলেন "শ্রী রাম ! হারি ওম !"

দাদা শ্রেয়াকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং কি আশ্চর্য্য, পরের মাসে ডি এড প্রথম বর্ষের ফলাফল বের হয় এবং শ্রেয়া তার কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেন ।

আমি নিজেও পঞ্চশীল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম এবং পাঁচটি পরীক্ষাতে পাশ করি । দাদা একবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তুমি আরেকবার পরীক্ষায় বসলে না কেন ?" আমি উত্তর দিয়েছিলাম, "দাদা, আমি আবার পঞ্চশীল পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছি, কয়েকদিন আগে আমি পঞ্চশীলের দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছি । সদগুরু বাপু আমাদের সবাইকে বারংবার পঞ্চশীল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে বলেন । বাপু বলেছিলেন যে যদি কেউ পরীক্ষায় একটু বাড়তি নম্বর পায়, তবে জেনে রাখা দরকার যে তার ভক্তি কিছুটা বেড়েছে । বাপুর এই কথা আমার ভালো লেগেছিলো" । দাদা খুশি হয়ে আমাকে বলেছিলেন "খুব ভালো" ।

আমাদের ছেলে রিতেশ গতানুগতিক পড়াশোনা পছন্দ করেন না। রিতেশ কোনোভাবে  দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন। যখন রিতেশ তার ভবিষ্যত এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তখন একদিন তার এক বন্ধু তাকে তার আগ্রহের কথা জিজ্ঞেস করেন । রীতেশ তাকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে আগ্রহের কথা জানান। এটা শুনে তার বন্ধু তাকে বোরিভালির জেটকিংস কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করে । বাপুর কৃপাতেই এটা সম্ভব হয়েছিল । শুধু তাই নয়, বাপুর অশেষ আশীর্বাদে রীতেশ শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি, পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন ।

এখন রীতেশ বাপুর কৃপায় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন ।

বাপুর কাছে আমরা চিরঋণী । তিনি আমাদের পরিবারের জন্য যা করেছেন তার জন্য আমরা সর্বদা তাঁর কাছে ঋণী হয়ে থাকব । একজন ভক্তের ক্ষুদ্র কর্মের কত প্রশংসা করেন ঈশ্বর !

সদগুরু যখন একজন ভক্তের নাম নিজের মুখে নেন, তা তখন সেই ভক্তের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ! পঞ্চশীল পরীক্ষায় বিশিষ্টতা অর্জনকারী ভক্তদের নাম বাপু নিজের মুখে  ঘোষণা করেন এবং তা আমাদের মধ্যে অসীম আনন্দের অনুভুতির সৃষ্টি করে । এটা তাঁর ভক্তদের প্রতি বাপুর সত্যিকারের ভালোবাসার নিদর্শন !

সদগুরু বাপুর চরণে শত কোটি প্রণাম !

রান্নার সময় গ্যাস লিক হওয়া সত্ত্বেও সদগুরুর কৃপায় কীভাবে রক্ষা পেলেন তিনি। - অরুণা আলাই , অমলনের।

 


আমরা প্রায়ই পড়ে থাকি বাড়িতে গ্যাস লিক বা গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কথা। আমরা এও জানি যে এই ধরনের দুর্ঘটনা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে আর তার পরিণামও। যে শ্রদ্ধাবান আমাদের কাছে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন তিনি তাঁর রান্নাঘরে গ্যাস লিক হওয়া সত্ত্বেও সদগুরু অনিরুদ্ধের (বাপু) কৃপায় রক্ষা পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয় , তিনি সকালবেলার তাঁর চা , জলখাবার ও এমন কী তাঁর দুপুরের খাবারও তৈরি করে রেখেছিলেন  অথচ সেইসময় কোনও ক্ষতি ছাড়াই আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তাঁরা।

গঙ্গাকে প্রবাহিত হতে আমরা দেখেছি। গঙ্গোত্রীতেও আমরা গিয়েছিলাম। সেই সদা প্রবাহিত জলধারা দেখে ভেবেছিলাম , হাজার হাজার বছর ধরে অবিরাম এই জলধারা কীভাবে বয়ে চলেছে ? বিজ্ঞানও এই ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না যে কেন এমনটা হয়ে চলেছে। বলা হয়ে থাকে , বিজ্ঞান যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই শুরু হয় আধ্যাত্মিকতা। তবে  অটল আস্থা থাকতে হবে ঈশ্বরের উপর , আর বিশ্বাস রাখতে হবে  সদগুরুর প্রতি। 

এই কথাই বাপু আমাদের বলেছেন বহুবার , "Ek Vishwas Asava Purta Karta Harta Guru Aisa.”  (একটা বিশ্বাস থাকতে হবে এমন যে "সদগুরু আমার কর্তা , আমার হর্তা , ত্রাণকর্তা" ) 

অরুণা আলাই বলছেন ... সত্যিই অত্যন্ত বিস্ময়কর ও অনির্বচনীয় এক অনুভব আমার হয়েছে। দিনটি ছিল , ৩রা সেপ্টেম্বর , ২০১৩ সাল। যথারীতি সকালে উঠে ,  আমি রান্নাঘরে চা বানাতে গিয়ে গ্যাস চালু করার চেষ্টা করলাম কিন্তু তা ধরাতে পারলাম না। আমার ছেলে তখন চেষ্টা করে ও পরে একটা নতুন সিলিন্ডার লাগিয়ে দিলে গ্যাস জ্বলে ওঠে। আমার বউমা তখন চা , সকালের জলখাবার ও দুপুরের খাবারও তৈরি করে নেয়। তারপর আমরা দুজনে মিলে রান্নাঘর পরিষ্কার করে নিই। 

পরে আমি , অনিলসিংহ এবং আমার মেয়ে , যখন আমরা ড্রয়িং রুমে বসেছিলাম , তখন হঠাৎ গ্যাসের গন্ধ পেলাম। কি ঘটছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রান্নাঘরে ছুটে গেলাম। দেখি , গ্যাসের পাইপ দিয়ে হিস হিস শব্দে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস বের হয়ে আসছে। সারা ঘরে তখন গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। বুঝলাম , এর অর্থ হল রেগুলেটরটি ভালভাবে লাগানো ছিল না ও তাই গ্যাস লিক হয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা অবিলম্বে রেগুলেটরটি বন্ধ করে দিলাম এবং অনিলসিংহ অভিযোগ জানাতে গ্যাস কোম্পানিকে ফোন করে দিলেন।

বিকাল ৩টের সময়  মেকানিক এসে সব চেক করে , বুঝতে পারে যে রেগুলেটরটিতে ভালভ নেই। আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। আমি মেকানিককে বললাম যে এটা অসম্ভব , কারণ আমরা মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে এই একই গ্যাস ব্যবহার করেছি।

তিনি সমানভাবে হতবাক হয়ে যান। দেয়ালে দত্তগুরু ও বাপুর ছবির দিকে তাকিয়ে বলেন " আপনাদের ওপর আপনাদের সদগুরুর আশীর্বাদ আছে আর সেজন্যই একটা বিরাট দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হলো।"

এরপর তিনি একটি ভাল্ব লাগিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারটিকে আবার ঠিক করে দিলেন। মনে মনে আমরা বাপুকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম। বাপুর আশীর্বাদের কারণেই এই  প্রাণহানি এড়ানো গেল। আমাদের সদগুরু ভবিষ্যতে কি ঘটতে চলেছে তা জানেন। এইটাই একমাত্র সত্য যে  শ্রদ্ধাবানরা যেখানেই থাকুক না কেন ও তারা যতই ভয়াবহ অবস্থায় থাকুক না কেন , সদগুরু তাদের রক্ষা করার জন্য সর্বদা তৎপর। বাপু , আমরা অম্বজ্ঞ। 

কিতী আধিব্যাধী তূ কেল্যাস শান্ত 

রক্ষিলেস মজলা ঘোর সঙ্কটাত 

বিসরলাস না মলা তূ অহোরাত

স্মর্তৃগামী বাপু , দত্তগুরু ওলখলো 

অনিরুদ্ধা তুঝ্যা মী কিতী ঋণী ঝালো।