Showing posts with label রামরক্ষা প্রবচন. Show all posts
Showing posts with label রামরক্ষা প্রবচন. Show all posts

Friday, 15 August 2025

রামরক্ষা প্রবচন ১ - রামরক্ষা স্তোত্রের জন্মকথা

রামরক্ষা স্তোত্রের জন্মকথা - বুধকৌশিক ঋষির প্রতিটি জীবের কল্যাণ কামনা এবং রাম নামের মহিমা
রামরক্ষা স্তোত্রের জন্মকথা - বুধকৌশিক ঋষির প্রতিটি জীবের কল্যাণ কামনা এবং রাম নামের মহিমা

রামরক্ষা প্রবচন ১ শুধু একটি সাধারণ প্রবচন নয়, বরং রামনামের অসীম শক্তি এবং বুধকৌশিক ঋষি কিভাবে এই স্তোত্রটি বিশ্বকে উপহার দিয়েছিলেন, তার এক মনোমুগ্ধকর কাহিনি। বাপু প্রবচন শুরু করেছিলেন ‘রাম রাম রাম’ এই নামজপ দিয়ে। তিনি বলেন—‘রাম’ এই একটিমাত্র নাম হাজারো নামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এবং যেখানে এই নামের স্মরণ হয়, সেখানে পাপ টিকে থাকতে পারে না। মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে যদি এই নাম মুখে থাকে, তবে তা শুধু সমাপ্তি নয়—এটি সারা জীবনের সাধনার সর্বোচ্চ বিন্দু।

রামরক্ষা স্তোত্র: শুধু মন্ত্র নয়, এক শক্তির উৎস

রামরক্ষা স্তোত্র শুধু একটি স্তোত্র নয়, এটি এক জাগ্রত মন্ত্র। বাপু স্পষ্ট করে বলেছেন—এটি এমন এক উজ্জ্বল প্রার্থনা যা রামনামের মূলে পৌঁছে দেয়। "ওঁ শ্রীগণেশায় নমঃ" দিয়ে শুরু হওয়া এই স্তোত্রের ঋষি হলেন "বুধকৌশিক ঋষি"। বাপু তাঁর নামের অর্থ সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন—‘বুধ’ মানে সচেতন, জ্ঞানী এবং ‘কৌশিক’ মানে মেঘের মতো। যেমন মেঘ জল সঞ্চয় করে সঠিক সময়ে বর্ষণ করে, তেমনি এই ঋষি হলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার—যা সর্বদা বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত, শুধু গ্রহণ করার মানসিকতা থাকা চাই।

রামরক্ষার জন্মকথা

বুধকৌশিক ঋষির জীবনযাত্রা ছিল আশ্চর্য ও প্রেরণাদায়ক। রামায়ণ যুগ শেষ হওয়ার পর যখন মানুষ রামনাম ভুলে গিয়েছিল, তখন তিনি সমগ্র ভারত ভ্রমণ শুরু করেন। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে তিনি স্বয়ং শিবের দর্শন পান। শিব তাঁকে বর চাইতে বললে, ঋষি কামনা করেন—"এই পৃথিবীর প্রত্যেকের মুখে যেন রামনাম থাকে"।

শিব স্নেহভরে বলেন—এটি সম্ভব নয়, কারণ প্রত্যেক জীবের ‘কর্মস্বাধীনতা’ আছে—অর্থাৎ, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মুখে রামনাম দেওয়া যায় না।

এ কথা শুনে শিব, পার্বতী, গণপতি, কার্তিকেয় ও নন্দি—সবাই তপস্যায় বসেন। নিজের দেবতার এই প্রচেষ্টা দেখে বুধকৌশিকও আহার-জল ত্যাগ করে তপস্যা শুরু করেন।

অবশেষে, যখন শিবের সামনে রাম প্রকট হন, তখনই বুধকৌশিক ঋষির সামনেও শিব প্রকট হন। বাপু বলেন—এটি ত্রিকালাত্মক দর্শন, রামেরই লীলা। রাম তাঁকে বর দেন—যে কেউ বুধকৌশিকের স্মরণ করবে, তার মুখে চিরকাল রামনাম থাকবে।

এরপর রাম বুধকৌশিক ঋষিকে শিব-পার্বতীর একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে যান, যেখানে শিব-পার্বতী রামনামে নিমগ্ন। সেই একান্ত তেজ ঋষি সহ্য করতে পারেন না—সেই তেজই রামনাম। এই তেজকে বিশ্বকল্যাণের জন্য সহ্য করতে করতে বুধকৌশিক ঋষি অর্ধনিদ্রায় চলে যান। সেই অবস্থাতেই তিনি রামরক্ষা স্তোত্র শ্রবণ করেন—যা ছিল এক অতুলনীয় দিব্য অভিজ্ঞতা।

সরস্বতীর কৃপা

ঋষির মনে যেন লেখনী দক্ষতার অহংকার জন্ম না নেয়, সেই জন্য দেবী সরস্বতী নিজেই কলম হাতে নিয়ে রামরক্ষা লিখে দেন।

প্রথম কে শুনেছিল রামরক্ষা?

স্তোত্র সম্পূর্ণ হওয়ার পর, ঋষির মনে প্রশ্ন জাগে—এটি প্রথমে কাকে শোনাবেন? তখন ঋষি বাল্মীকি দৌড়ে এসে বলেন—প্রথমে শোনার অধিকার তাঁর। এরপর আসে ক্রৌঞ্চ পাখি ও তার সঙ্গিনী, সেই পাখিকে যিনি বাণ মেরেছিলেন সেই শিকারি, বাণ যিনি বানিয়েছিলেন সেই লোহারি, তাঁকে বিদ্যা যিনি শিখিয়েছিলেন সেই লোহারির মা—এভাবে ক্রমে মানবজাতির পূর্বপুরুষ মনু ঋষি পর্যন্ত সবাই আসে। শেষে ব্রহ্মা ও শিবও এসে প্রথমে শোনার দাবি জানান।

যখন সবাই প্রথম শোনার অধিকার দাবি করতে থাকে, তখন স্বয়ং শ্রীরাম প্রকাশিত হন। তিনি বলেন—এই প্রতিযোগিতার কারণে সমগ্র বিশ্ব এখানে সমবেত হয়েছে। শিব তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন—কারণ সমগ্র মানবজাতি রামরক্ষা শ্রবণ করতে এখানে এসেছে। তাই বলা হয়—"এই বিশ্বে এমন একটি জীবও নেই, যে জীবনে অন্তত একবার রামরক্ষা শোনেনি"।

রামরক্ষা: এক অক্ষয় ভাণ্ডার

বাপু শেষে বলেন—রামরক্ষা শুধু একটি স্তোত্র নয়, এটি রামনামের এক অক্ষয় ভাণ্ডার যা সমগ্র বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে। যে বুধকৌশিক ঋষি নিজের দেহ, অহংকার, সর্বস্ব ত্যাগ করে শিবের কাছ থেকে রামরক্ষা শ্রবণ করেছিলেন, তাঁকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রণাম করা হয়।

যে রামরক্ষার জন্মকথা এত পবিত্র ও মহৎ, যার প্রতিটি শব্দ গভীর অর্থে পরিপূর্ণ—সেই স্তোত্র নিঃসন্দেহে মহান।

এই প্রবচন থেকে আমরা রামনামের মাহাত্ম্য, রামরক্ষার জন্মকথা, ভক্তির শক্তি এবং বুধকৌশিক ঋষির নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও বিশ্বকল্যাণে তাঁর অসীম পরিশ্রমের কথা জানতে পারি।